রোববার মিয়ানমারে নির্বাচন, ভোট হবে না রাখাইনে
৭ নভেম্বর ২০২০ ১১:৫০
দীর্ঘ ৫০ বছরের সামরিক শাসনের পর মিয়ানমারে কার্যত দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোববার (৮ নভেম্বর)। দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যসহ ৫৬টি শহরে নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে না। খবর বিবিসি, ডয়চে ভেলে।
এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ও রাখাইন জাতিগোষ্ঠীকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ায় তাদের রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এদিকে, মিয়ানমারে সর্বজনগ্রাহ্য একটি নির্বাচন আয়োজনে প্রধান অন্তরায় দেশটির সংবিধান। সংবিধান অনুসারে, দেশটির পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশ আসন পূর্ণ হয় জনগণের ভোটে। বাকি ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনী মনোনীত সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। ২০০৮ সালে গ্রহণ করা সংবিধানের আলোকেই ২০১৫ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। ওই সংবিধানে এমন সব শর্ত যুক্ত করা হয়েছে, যাতে অং সান সু চি আর কোনোদিনই প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।
এর আগে, ১৯৬২ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী তৎকালীন বার্মার ক্ষমতা দখল করে। ১৯৯০ সালের ২৭ মে সামরিক শাসকদের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়। সেই নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জয়লাভ করলেও সামরিক জান্তা ওই নির্বাচনের ফলাফল অস্বীকার করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে স্টেট পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এসপিডিসি) গঠন করে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করে।
দীর্ঘ ৫০ বছর সামরিক শাসনের পর ২০১০ সালে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করে মিয়ানমার। গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান শান্তিতে নোবেল জয়ী গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি। ওই বছরেই অনুষ্ঠিত ব্যাপক একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলো ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) যে নির্বাচনে অংশ নেয়নি সু চি’র দল।
পরে, ২০১৫ সালের নির্বাচনে বড় জয় পায় সু চি’র দল এনএলডি। কিন্তু, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার ঝড় ওঠে সু চি’র বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ওই নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান।
অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে অং সান সু চি’র এনএলডি পার্টির বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল ইউএসডিপি। যারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। নির্বাচনি প্রচারণায় ইউএসডিপি তাদের প্রতিপক্ষ এনএলডি’র বিরুদ্ধে যেসব কথা জোরেসোরে বলছে তার মধ্যে একটি হলো – এনএলডি বাঙালি মুসলিমদের স্বাগত জানিয়েছে। মিয়ানমারে সাধারণত রোহিঙ্গাদের বোঝাতে ‘বাঙালি মুসলমান’ এই শব্দ যুগল ব্যবহার করা হয়।
#Myanmar: “This is not only wrong, it is dangerous,” says UNSR @RapporteurUn on mVoter2020 identifying #Rohingya as “Bengali.”
What do you think @SabatucciEU? Will EU publicly call out the app?
Read the full statement: https://t.co/l01kMZ2Ggo pic.twitter.com/4bBdC8RAxH
— John Quinley III (@john_hq3) November 3, 2020
এ ব্যাপারে, দেশটির ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) নেতা উ থান থে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন – রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারের দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই।
পাশাপাশি, মিয়ানমারের এবারের নির্বাচনে মোট নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা তিন কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে ৫০ লাখ তরুণ ভোটার। ক্ষমতাসীন এনএলডি সরকার সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ছাত্র আন্দোলন দমাতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। তার জবাবে, অল বার্মা ফেডারেশন স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আসন্ন নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে।
এছাড়াও, নির্বাচনকে সামনে রেখে মিয়ানমারে বিরোধী মতামতের রাজনৈতিক নেতাদের আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
অপরদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই করোনায় দেশটিতে ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও, আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৩৪ হাজার।
ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) নির্বাচন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) মিয়ানমার রাখাইন রোহিঙ্গা সেনাবাহিনী