চলনবিলে শুঁটকি তৈরির ধুম, ব্যস্ত ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা
৮ নভেম্বর ২০২০ ০৮:৪৬
সিরাজগঞ্জ: জেলার চলনবিল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুঁটকি তৈরির ধুম পড়েছে। এ অঞ্চলের তিন শতাধিক চাতালে এখন দেশি প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বিভিন্ন স্থানে শুঁটকি তৈরি করতে চাতাল তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, এ ব্যবসায় অনেক লাভ। দেশব্যাপী চলনবিলের মাছের শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিল এলাকায় এ বছর প্রচুর পরিমাণে টেংরা, পুঁটি, বাতাসী, চেলা, মলা, ঢেলা, টাকি, চিংড়ি, বোয়াল, চিতল, শিলং, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এখন মাছের দামও অনেক কম থাকায় সবাই শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন চাতালে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি চাতালে নারী-পুরুষ মিলে ১০-১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তবে এ কাজে নারী শ্রমিকরাই বেশি দক্ষ বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চাতালে নারী শ্রমিকই বেশি।
শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি তিন কেজি কাঁচা মাছ থেকে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। প্রতিমণ কাঁচা মাছ চার হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দরে কেনা হয়। এসব শুঁটকি প্রকারভেদে প্রতি মণ ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়। মাছগুলো চাতালে নেওয়ার পর বাজারজাত করতে মাসখানেক সময় লাগে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বড়পাঙ্গাসী ও মোহনপুর এলাকার জেলে আইয়ুব আলী, শাহজাহান শেখ, আবু কালাম জানান, শুকনো মৌসুমে তারা ক্ষেতে-খামারে কাজ করেন। বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকায় রাতভর খরা জাল দিয়ে চলনবিলে মাছ শিকার করেন। অনেকে মাছ শিকারের পর আড়তে বিক্রি করেন। সেই মাছগুলো যায় শুঁটকির চাতালে।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহেদ আলী জানান, গত বছর এ এলাকায় ৯৫ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর পোনা নিধন অভিযান জোরদার এবং বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় মাছের প্রাচুর্য বেড়েছে। যে কারণে চলনবিল এলাকায় এবার মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে চলতি বছর শুঁটকি উৎপাদন আরও বাড়বে। মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।