Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাহজালালে পাখি তাড়াতে ভরসা মাত্র ২ বন্দুক!


১৫ নভেম্বর ২০২০ ১০:৩২

ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তিনটি টার্মিনাল ও রানওয়ের পাশাপাশি রয়েছে জলাশয়। যেখানে মাছ চাষ করা হয়। এছাড়া রয়েছে সবুজ ঘাসে আবৃত মাঠ। মাছ ও সবুজ ঘাস পাখিদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। আর এ কারণে সারাবছরই শাহজালালে থাকে পাখির উপদ্রব। তবে শীত মৌসুমে সেখানে পাখির আনাগোনা বেড়ে যায়। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর হয় মাত্র দুটি বন্দুক দিয়ে!

বিজ্ঞাপন

শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, সেখানে প্রায় প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ বিমান ওঠানামা করে। কিন্তু পাখির কারণে এই বিমান ওঠানামায় পাইলটদের মাঝে-মধ্যেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বলতে গেলে দুর্ঘটনার ভয়ে তারা আতঙ্ক নিয়েই বিমান ওঠানামা করায়। পাখির কারণে ইতোমধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে শতাধিকের বেশি ফ্লাইট জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়েছে।

এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে শুধু বিমান বাংলাদেশ বিমান ১০টি বার্ড স্ট্রাইকের শিকার হয়। ২০১২ সালে ছয়টি, ২০১৪ সালে ১৫টি ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করে। গত বছর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট বার্ড হিটের কবলে পড়লে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। এমনকি শাহজালালে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখা হয় প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময়। তবে বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতির সম্মুখীন হয় ফ্লাইটগুলো।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলে বেশি ক্ষতি হয়। বড় ধরনের দুর্ঘটনার পাশাপাশি পাইলটদেরও মানসিক চাপে থাকতে হয়। ইঞ্জিনের ফ্যান, ব্লেড ও স্পিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ার লাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জনসংযোগ মো কামরুল ইসলাম বলেন, ‘পাখি তাড়ানোর বর্তমান পদ্ধতির আধুনিকায়ন দরকার। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় পাঁচশ থেকে এক হাজার ফিটের মধ্যে সাধারণত বার্ড হিটের আশঙ্কা থাকে। শাহজালাল বিমানবন্দরের উত্তর পাশে যে জলাশয় রয়েছে সেটার কারণে পাখির আনাগোনা বেশি। সংশ্লিষ্টরা ঠিক মতো কাজ না করায় পরিত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। সঠিকভাবে যদি পাখি নিধন করা না হয় তাহলে যে কোনো সময় যেকোনো বিমান দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। এতে জানমালের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

পাখি তাড়ানোর বিষয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দুটি বন্দুক আছে। এছাড়া নতুন কিছু বন্দুক কেনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখন বিমানবাহিনী এবং আমরা মিলে পাখি তাড়ানোর কাজ করি। সামনে পাখি তাড়াতে লেজার রশ্মি এবং সাউন্ড সিস্টম কেনার প্রক্রিয়া চলছে।’

এ বিষয়ে বিমান বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শাহজালালে পাখি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার জানা মতে, বিমানবন্দরের ছয়টা বন্দুকের মধ্যে চারটা নষ্ট। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থ না নিলে যেকোনো সময় বিমান দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। কারণ শীতের সময় পাখির আনাগোনা বেশি থাকে। একবার বার্ড হিট হলে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। তাই কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক ধরনের রাডার দিয়ে পাখি নিধন করা যায়। আমরা শাহজালালে সেগুলো বসানোর জন্য কাজ করছি। খুব দ্রুতই সেগুলো বসাতে পারব বলে আশা রাখি।’

তবে এ বিষয়ে জানতে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হককে ফোন দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

পাখি বিমানবন্দর শাহজালাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর