যে গ্রামে গাছে গাছে ‘ফুটে থাকে’ থোকা থোকা শামুকখোল
১৬ নভেম্বর ২০২০ ০৮:০০
জয়পুরহাট: জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর গ্রাম। এই গ্রামের গাছে গাছে বাসা হাজারো শামুকখোল পাখির। গ্রামবাসী গভীর মমত্ব দিয়ে আগলে রেখেছে পাখিগুলোকে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে গাছে গাছে থোকায় থোকায় ‘ফুটে আছে’ শামুকখোল। নিরাপদ আশ্রয় আর মানুষের ভালোবাসায় এই কানাইপুকুর গ্রামে শামুকখোল পাখির সংখ্যা এখন দশ হাজার ছাড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আলমপুর ইউনিয়নের কানাইপুকুর গ্রামের আব্দুস সামাদ মণ্ডল ও সোবহান মন্ডলের পুকুরের শতাধিক গাছে শামুকখোলসহ ছয় প্রজাতির হাজার হাজার পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম। প্রতিদিন বিকেলে হাজারও শামুকখোল পাখি এসে আশ্রয় নেয় মণ্ডল পুকুরের গাছগুলোতে। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত চারপাশে তারা মনের সুখে ডানা ঝাপটায়, কেউবা আবার বাচ্চার মুখে তুলে দেয় খাবার।
প্রকৃতির অপরূপ খেয়ালে এখানে গত এক যুগ ধরে বাসা বেঁধে আছে হাজার হাজার শামুকখোল পাখি। সন্ধ্যায় পুরো পুকুর মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কল-কাকলিতে। রাতভর চলে ওদের ডানা ঝাপটানো। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলেই উড়ে যায়। দিনশেষে নীড়ে আবারও ফিরে আসে। শামুখখোল, শামুকভাঙা, হাইতোলা মুখ এসব নামে পরিচিত পাখিগুলো।
গ্রামের পার্শ্ববর্তী খাল-বিল আর ফসলের মাঠ থেকে পোকা মাকড় ও শামুক ঝিনুক খেয়ে জীবন বাঁচে পাখিগুলোর। নিরাপদ আশ্রয় আর ভালবাসায় বাসা বেঁধে প্রজনন থেকে শুরু করে ডিম, বাচ্চা, প্রাপ্ত বয়স্ককাল সব তাদের এখানেই। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর সংখ্যাও।
পুকুরের মালিক আব্দুস সামাদ ও তার ছোট ভাই সোবহান বলেন, ‘পাখিগুলোকে আমরা আগলে রেখেছি। গাছের ফলমূল আমাদের আর হয় না। পুকুরেও মাছ ভাল হয় না, কারণ পুকুরটির চারদিকে গাছ-গাছড়ায় জঙ্গল হয়ে গেছে।’
কানাই পুকুর গ্রামের কলেজ পড়ুয়া আল আমিন বলেন, ‘পাখি সব করে রব, কবিতার এ লাইনের বাস্তবচিত্র দেখা যায় এখানে। প্রতিদিন বিকেল হলেই শামুকখোল ছাড়াও নানা জাতের অসংখ্য পাখি এসে আশ্রয় নেয় ওই পুকুরের প্রায় শতাধিক গাছে।’
সার্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্রামবাসীর পাশাপাশি কানাইপুকুর গ্রামে পাখির অভয়ারণ্য গড়তে প্রশাসন আন্তরিক হবেন এমন দাবি এলাকাবাসীর।
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে এলাকার সচেতন মহলকে অনুরোধ করেছি পাখিগুলোকে যাতে কেউ না মারে সেদিকে খেয়াল রাখতে। পাখিগুলো আমাদের দেশের সম্পদ।’ প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শুধু নিরাপত্তা নয়, পাখি কলোনির সার্বিক দেখভাল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।