Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভাসানচরে হবে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন, নিরাপত্তায় হচ্ছে থানা


১৭ নভেম্বর ২০২০ ২২:৫৯

ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের প্রস্তুতি চলছে। ছবি- ইন্টারনেট

ঢাকা: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হবে নোয়াখালীর ভাসানচরে। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে কাজ। এরই মধ্যে ভাসানচরকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। আর সেখানে পুনর্বাসিত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দিতে নতুন একটি থানা স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন থানা স্থাপনে এরই মধ্যে একটা কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সেখানে জনবল নিয়োগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি পাঠানো চিঠিতে ওই থানার জন্য ২৪টি পদ ও চারটি যানবাহন চাওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত ২১ অক্টোবর সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় থানা স্থাপনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে। সে অনুযায়ী কাঠামো তৈরি করা হয়। এখন জনবল নিয়োগ নিয়ে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পুলিশ অধিদফতর কর্তৃক বর্ণিত থানা স্থাপন ও এর কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে পদ সৃষ্টি, যানবাহন ও সরঞ্জামাদি টিএন্টিভুক্তকরণে জনপ্রশাসনের নির্ধারিত চেকলিস্টের ১৪ নম্বর ক্রমিকের শর্তানুযায়ী জননিরাপত্তা বিভাগ সম্প্রতি একটি সভা আহ্বান করে। সভায় পুলিশ অধিদফতরের প্রস্তাবিত ১১৫টির পরিবর্তে ৬৩টি পদ সৃষ্টি, ২৬টি যানবাহনের পরিবর্তে ১০টি এবং একটি জেনারেটর টিএন্টিভুক্তকরণের সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশ পর্যালোচনা শেষে নতুন স্থাপন হতে যাওয়া ভাসানচর থানার জন্য ২৪টি পদ সৃষ্টি, চারটি গাড়ি এবং একটি জেনারেটরের প্রস্তাবে সম্মতি পাওয়া যায়। থানা স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে নতুন উপজেলা ও থানা স্থাপন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোট ছয়টি মৌজা নিয়ে ভাসানচর থানা স্থাপন হবে। মৌজাগুলো হলো- ভাসানচর, শালিকচর, চরবাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা এবং কেওড়ার চর।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে ফেরত পাঠানোর আগে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শিবিরগুলো থেকে ভাসানচরে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরে গত বছর সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী ভাসানচর উন্নয়ন ও অবকাঠামো নিমার্ণে দ্রুত বরাদ্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত বছর ভাসানচর এলাকা পরিদর্শন করেন। সাগরবর্তী এই বিস্তীর্ণ চরটির উন্নয়নে এরইমধ্যে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সরকার। নৌবাহিনী তত্ত্বাবধানে ভাসানচরের উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। চরটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হওয়ায় এখানে পুনর্বাসিত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে থানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, ভাসানচরে দুটি পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কথা চিন্তা করে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। বর্তমানে বরাদ্দ করা পাঁচ হাজার একর জমিতে গুচ্ছগ্রাম পদ্ধতিতে আড়াই লাখ ও আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে চার লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে পুর্নবাসন করা যাবে। সেখানকার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

নোয়াখালী জেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হাতিয়া উপজেলা। ২১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাতিয়ার জনসংখ্যা ৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৬৩ জন। হাতিয়ার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের প্রস্তাবিত ভাসানচর থানার আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা ৬০ হাজার। হাতিয়া থানা থেকে ভাসানচরের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। হাতিয়ার পূর্ব সীমানায় অবস্থিত ভাসানচর। চরটিতে ৬টি মৌজা রয়েছে। ভাসানচরে বর্তমানে জমির পরিমাণ ১৩ হাজার একর। এর মধ্যে অতি জোয়ারে জলমগ্ন থাকে আড়াই হাজার একর। পুরো চরটিতে খাল ও শাখা খালের জমির পরিমাণ ১৫০০ একর। সেখানে পাঁচ হাজার একর জমিতে গুচ্ছগ্রাম করা হচ্ছে। বাকি জমি বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, ঘুর্ণিঝড়, আশ্রয়কেন্দ্র, স্যানিটেশন, নলকূপ, পুকুরসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হবে।

জানা গেছে, স্বাভাবিক জোয়ারে পুরো ভাসানচরে তিন থেকে চার ফুট পানি ওঠে। আর ভরা পূর্ণিমা ও অমাবশ্যায় স্থানভেদে চার থেকে আট ফুট পর্যন্ত পানি দেখা যায়। চরটিতে নদীর স্বাভাবিক ভাটায় প্রায় ৫০ হাজার একর পর্যন্ত জমি ভেসে ওঠে। চর জেগে ওঠার ভিত্তিতে ২০০০-২০০১ সাল থেকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬ হাজার ১১১ একর ম্যানগ্রোভ ও ৩৯ একর মাউন্ট বনায়ন করেছে বন বিভাগ। তবে ভাসানচরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও এনজিওগুলোর প্ররোচণায় টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে চায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘এমন অভিযোগ ওঠা এনজিওগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, মিয়ানমার জাতিগত নিধন আর নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে তিন বছর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল। তার আগে থেকে আরও তিন লাখ আশ্রয় নিয়েছিল। বর্তমানে সব মিলিয়ে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের দুটি উপজেলায় গঠিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। নানা কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েও যাদের ফেরত পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত তাদের অস্থায়ীভাবে ভাসানচরে পুনর্বাসন করতে চায় সরকার।

পুনর্বাসন ভাসানচর রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা পুনর্বাসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর