‘নদী রক্ষায় যেনতেনভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে’
১৮ নভেম্বর ২০২০ ১৫:৫১
ঢাকা: নদী রক্ষায় যেনতেনভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, একটি প্রকল্প পাস হওয়ার সময় বালু কোথায় ফেলা হবে, কোন জায়গায় কতটুকু দেওয়া হবে, কোন মেশিনে উত্তোলন করা হবে- সবকিছু উল্লেখ থাকে। নদী ড্রেজিংয়ের সময় আমরা যেনতেনভাবে যেখানে-সেখানে বালু ফেলি না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পাড় ভেঙে যায়। তাই আপনার এলাকায় অবৈধভাবে কাউকে বালু উত্তোলন করতে দেবেন না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নয়- জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর প্রেসক্লাবে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর আয়োজিত ‘নদী রক্ষায় প্রয়োজন সঠিক নিয়মে নদী খনন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এ জন্য ডেল্টা প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে খাল খননে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ভাটির দেশ হওয়ায় প্রতিবছর উজান থেকে ২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পলি চলে আসে। এতে নদী ভরাট হয়ে যায়। ফলে বর্ষায় নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। এক বছর ড্রেজিং করলে পরের বছর নদী ভরাট হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘পলি ফসল ফলানোর জন্য ভালো। আমি আসার পর নদী তীরবর্তী জমি লিজ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ ধনীরা জমি লিজ নিয়ে ভবন তৈরি করে ফেলে। তবে কৃষি ও মাছ চাষের জন্য জমি লিজ দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। বর্তমানে আমার মন্ত্রণালয় যথেষ্ট গতিশীল হয়েছে। এখন জমি লিজ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। নদী রক্ষায় চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আমি সততার সঙ্গে কাজ করছি। নদী রক্ষায় আমাদের সহায়তা করুন। আমাদের ভুল হলে ধরিয়ে দিন।’
বৈঠকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ৫০ হাজার নদী দখলদারদের তালিকা তৈরি করেছি। এরই মধ্যে দখল হওয়া ৩২ শতাংশ জমি উদ্ধার হয়েছে। অবৈধভাবে নদী দখল প্রতিরোধে আমরা সোচ্চার রয়েছি। আওয়ামী লীগের হলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। নদী কমিয়ে নদীর উন্নয়ন নয়। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও আনুপাতিক হিসাব রেখে নদী খনন করতে হবে। নদী পাড়ের জমি স্থায়ী বসতি করার জন্য লিজ দেওয়া যাবে না।’
মূল প্রবন্ধ পাঠকালে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন শামস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর গুরুত্ব অনুধাবন করে ৪ হাজার কিলোমিটার নদী পথকে ১০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমান সরকার নদী খননে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই মধ্যে বর্ষকালে নদীপথ ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে।’
বৈঠকে সংগঠনটির পক্ষে কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নদী খনন পরিকল্পনায় আরও যত্নশীল হতে হবে। নদীর বহমান স্রোতধারা, ভৌগলিক বিষয়, নদীর চরিত্র, আবহাওয়ার বিষয় আমলে রেখে নীতি নির্ধারক প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ তৈরি করতে হবে। কার্যাদেশ অনুযায়ী নদীর তলদেশ সমতলের একটি নিয়মনীতি প্রণয়ন করা দরকার। দশমিক শূন্য তিন মিটারের অধিক নদী খনন করলে সেখানে নদীর ক্ষতির কারণ হয়, এজন্য জরিমানা আাদায়র শর্ত দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা প্রয়োজন, যেখানে নদী গবেষক, বুয়েটের টেকনিক্যাল, পরামর্শক, প্রফেসরসহ স্টেক হোল্ডার, ড্রেজার মালিক সমিতির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকবেন। সরকারের টেন্ডারে বা দরপত্রে শর্ত চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাটার সাকশন ড্রেজার এবং হপার ড্রেজার দিয়ে কার্যাদেশ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হতে হবে। অনতিবিলম্বে সারাদেশে বালুতোলা মেশিন দিয়ে নদী খনন করা বন্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এম আমিনুল হক, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক মিহীর বিশ্বাস, বুয়েটের প্রকৌশলী মীর তারেক আলীসহ আরও অন্যান্যরা বক্তৃতা করেন।
নদী-রক্ষা নোঙর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বন্ধ বালু উত্তোলন