আমনের বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে
২০ নভেম্বর ২০২০ ০৮:০১
সিরাজগঞ্জ: শস্য ভাণ্ডারখ্যাত চলনবিলসহ সিরাজগঞ্জ জেলায় চলতি মৌসুমে মাঠজুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। দফায় দফায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মুখে হাসি এনেছে আমন ধানের বাম্পার ফলন। এরইমধ্যে রোপা আমন ধান কাটাও শুরু হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় রোপা আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দফায় দফায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় ক্ষতি হওয়ার পরও আমনের যে ফলন হয়েছে তাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কৃষকরা। শ্রমিক সংকট না হলে আগামী মাসের মাঝামাঝি কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারবে বলেও আশা করছে কৃষি অধিদফতর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাধারণ শ্রমিকদের পাশাপাশি চলনবিলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী-পুরুষেরাও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে মাঠে মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গত পনের দিনে ১০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, পাঁচবারের বন্যায় জেলার প্রায় ৩ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলার ৯টি উপজেলা এবার রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬৯ হাজার ২৫০ হেক্টর ধরা হয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়। শেষ পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমিতে রোপা-আমনের চাষাবাদ হয়। বন্যার কারণে জেলার উপজেলাগুলোতে ৮৪৪ হেক্টর জমিতে আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার সোনতলা গ্রামের কৃষক রায়হান আলী বলেন, ‘আমাদের এখনও রোপা আমন কাটা শুরু হয়নি। এক সপ্তাহ পড়ে কাটা শুরু হবে। এবারের বন্যা হলেও ধানের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে।’
রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মগাছা গ্রামের বর্গাচাষি আব্দুল মালেক বলেন, ‘করতোয়া নদীর পাড়ে পতিত এক বিঘা জমিতে রোপা-আমন লাগানো হয়েছিলো। ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। এবার ধানের দাম গতবারের চেয়ে বেশি থাকায় চাষ লাভজনক হয়েছে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, এবার রোপা-আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় ৫ দফা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কৃষক।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লুনা বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পাঁচবার বন্যায় জলাবদ্ধতার কারণে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া প্রায় ২০/২৫ বিঘা জমিতে দীর্ঘসময় পানি থাকার কারণে রোপা আপন ধান হলুদ হয়ে যায়। পরে অনেক চেষ্টা করেও ওই পরিমাণ ধানের আবাদ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে পাঁচবারের বন্যার পরও তুলনামূলকভাবে ফলন ভালো হয়েছে।’
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) আবু হানিফ বলেন, ‘এবার পাঁচবারের বন্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রার কিছুটা কম আবাদ হয়েছে। তারপরও বন্যা ছাড়া ধানের রোগব্যাধি ও অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।’ এতে কৃষকেরা তাদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।