Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সশস্ত্র বাহিনীর বহুমুখী কার্যক্রমের প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর


২১ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৫৯

ঢাকা: কেবল প্রতিরক্ষা নয়, দেশে ও বিদেশে বহুমুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতা প্রয়োগ করে দেশের প্রতিরক্ষা ও দেশ গড়ার কাজে আরও বেশি অবদান রাখবেন— এই প্রত্যাশা করেন তিনি।

শনিবার (২১ নভেম্বর) ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০০০’ উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি নিজেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে যে সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম হয়েছিল, তা আজ মহীরূহ হয়ে বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি অনুসরণ করেই এই বাহিনী আজকের পেশাদার একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন- ‘সশস্ত্র বাহিনীর এত আধুনিকায়ন আর কোনো সরকার করেনি’

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা একটি উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করেছিলেন প্রতিরক্ষা নীতি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালেই গড়ে তোলেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একইসঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনটি ঘাঁটি উদ্বোধন করেন। ভারত ও যুগোশ্লভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ করেন। ১৯৭৩ সালে সে সময়ের সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডারের মতো অত্যাধুনিক সরঞ্জাম বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেন।

বিজ্ঞাপন

আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী লগ্নে জাতির পিতা প্রণীত জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনাকালে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ‘লকডাউন কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করেছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে মহামারি প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি এবং বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকার সমন্বিত করোনাভাইরাস চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। করোনাকালে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নানাবিধ কার্যক্রমও অত্যন্ত প্রশংসা কুড়িয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলার বাংলাদেশ নৌবাহিনী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা এবং দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারদের মানবিক সহায়তা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। মালদ্বীপের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত চিকিৎসা সামগ্রী  নৌবাহিনীর জাহাজ যোগে সেখানে পাঠানো হয়।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অন্য কার্যক্রমগুলোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ‘বিজয়’ লেবাননের বৈরুতে বসবাসরত বাংলাদেশি পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে। আমাদের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, শিক্ষক, বিশিষ্টজনসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে আটকে পড়া দেশি-বিদেশি নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ১৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের করোনা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি মেডিকেল টিম মালদ্বীপে পাঠানো এবং লেবাননে সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সেখানে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ অতীতে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতা দেখিয়েছেন। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও সশ্রস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা অসুস্থ, তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

জাতিসংঘ শান্তি মিশনের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। এ বছর জাতিসংঘের ৭৫তম বছরপূর্তিতে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা আবারও সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের যেসব শান্তিরক্ষী মারা গেছেন, আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেল পদবীর অফিসার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছেন এবং ফোর্স কমান্ডার হিসেবে একজন মেজর জেনারেল বা লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবীর অফিসার নিয়োগের কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে।

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অনেক উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ যখন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে, তখনো আমাদের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন ও রফতানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে হবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবই।

সবশেষে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতায় বলীয়ান হয়ে দেশের প্রতিরক্ষা এবং দেশ গড়ার কাজে আরও বেশি অবদান রাখবেন— পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করি। সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২১ নভেম্বর সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিন বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণের মুখে পিছু হঠতে শুরু করে পাক বাহিনী। একপর্যায়ে ১৬ ডিসেম্বর তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। গৌরবময় এই দিনটি স্মরণ করতেই স্বাধীনতার পর ২১ নভেম্বরকে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে আসা হচ্ছে।

প্রতিবছর এই দিনে সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে এ বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সে অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়টিও ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাহিনীগুলো নিজেদের মতো করে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

এই দিনটিতে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করতে পারলেও ভাষণে তিন বাহিনীর সদস্যসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।

টপ নিউজ নৌবাহিনী বিমান বাহিন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সশস্ত্র বাহিনী দিবস সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন সেনাবাহিনী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর