তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের ৮ বছর: সাক্ষী হাজির না হওয়ায় শেষ হয়নি বিচার
২৩ নভেম্বর ২০২০ ২৩:০৯
ঢাকা: রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আট বছর পূর্ণ হলো। ওই অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১৩ শ্রমিক। ভয়াবহ সেই ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম একটি মামলা দায়ের করলেও আট বছরেও শেষ হয়নি বিচারকাজ। নির্ধারিত সময়ে সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় মামলাটির বিচার থেমে আছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন কোন সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত আগামী ১৩ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মুর্শিদ উদ্দীন খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলার সাক্ষীদের হাজির করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অনেক সাক্ষীকে সমনের পাশাপাশি অজামিনযোগ্য পরোয়ানাও পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে আদালত মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আশা করছি, পরবর্তী ধার্য তারিখে সাক্ষীরা আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেবেন। আর মামলাটির বিচার কাজ দ্রুত শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী হেলেনা পারভীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই মামলাটিতে সাক্ষী হাজির হয় না। এছাড়া করোনার কারণে আদালত দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তবে আসামিদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে। সাক্ষীরা এলে এতদিনে মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যেত। সেখানে আসামিরা দোষী না নির্দোষ প্রমাণ করতে পারব। আমরা সবাই সুষ্ঠু বিচার চাই। কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটিতে ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৭ মার্চ আবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হয়নি। মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর মামলাটি তদন্তের পর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পুলিশের পরিদর্শক এ কে এম মহসীনুজ্জামান। মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।
তবে এই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আল আমিন, রানা, শামীম, শহিদুজ্জামান ও মোবারক হোসেন পলাতক রয়েছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, তাজরীন গার্মেন্টস ভবনের নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমন পথ ছিল না। আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চায়। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা অগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপন মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১৩ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যায়। এছাড়া আহত হন আরও ১০৪ জন। গার্মেন্টসটিতে ওই সময় ১ হাজার ১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনার দিন ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। আগুনে তৃতীয় তলায় ৬৯ জন, চতুর্থ তলায় ২১ জন, পঞ্চম তলায় ১০ জন এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যান ১১ জন। ৫৮ জনের মৃতদেহ শনাক্ত হওয়ায় তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি ৫৩ জনের মৃতদেহ শনাক্ত না হলেও তাদের জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তিন দাবিতে অনশন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রেসক্লাব ছাড়বেন না বলেও জানিয়েছেন।