করোনার অভিঘাত: পশ্চিমের ৪ জেলার জন্য ২১৮০ কোটি টাকার প্রকল্প
২৪ নভেম্বর ২০২০ ০৮:১৭
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অভিঘাতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। প্রায় দুই হাজার দুইশ কোটি টাকার এই প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হবে গ্রামীণ যোগাযোগ ও অবকাঠামোর। গড়ে তোলা হবে বাজার। তাতে করে কৃষিপণ্য বিপণন ও বাজারজাতকরণ সহজ হবে। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। প্রথম পর্যায়ে খুলনা বিভাগের চার জেলা— যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরায় বাস্তবায়ন করা হবে প্রকল্পটি।
প্রকল্পটির শিরোনাম ‘ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম ফেজ-১: রুরাল কানেক্টিভিটি, মার্কেট অ্যান্ড লজিস্টিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট’। প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়। ২ হাজার ১৮০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার এই প্রকল্পে সরকারের নিজেস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৬৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, বাকি ১ হাজার ৫৩৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা আসবে বিশ্বব্যাংকের ঋণ আকারে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে— গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিপণ্য পরিবহন, বিপণন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণে ভৌত সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন। এই প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় বাজার ও গ্রামীণ হাটগুলোর সঙ্গে মহাসড়কের যোগাযোগ ৩৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। এতে করে কৃষি ও অকৃষি খাতে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ হবে। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্যও এলজিইডির অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর কারণে দেশে, বিশেষত দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উম্মোচিত হয়েছে। বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির এই প্রেক্ষাপটে মহাসড়ক প্রশস্ত করা, কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা সম্প্রসারণসহ গ্রামীণ যোগাযোগ, তথা সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার ও বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে এই প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। এই কর্মসূচির আওতায় সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে ভোমরা স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হবে, যা বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। অন্যদিকে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ গ্রোথ সেন্টার এবং বাজারগুলোর সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্কও উন্নয়ন করা হবে এই কর্মসূচিতে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মোট পাঁচটি পর্যায়ে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে প্রথম দুইটি পর্যায়ে (ফেজ-১ ও ফেজ-২) অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রাথমিকভাবে ফেজ-১-এর আওতায় যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াড্ঙ্গা ও মাগুরা জেলার সমন্বয়ে ‘ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগাম ফেজ-১’ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমগুলোর আওতায় সড়ক ও বাজার উন্নয়ন করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক ও সার্ভে, সড়ক মেরামত, পূর্ত কাজ ইত্যাদি পরিচালনা করা হবে। আর এসব করতে গিয়ে ১ হাজার ৫২০ জনমাস পরামর্শক ও সার্ভে, ৬১১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ১২০টি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ৬১১ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক ও গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ সংস্কার কাজ এবং ২৭৯ দশমিক ৯৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।
খুলনা বিভাগের যশোর জেলার সদর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা ও মনিরামপুর উপজেলা; মাগুরা জেলার শ্রীপুর, সদর, শালিখা ও মোহাম্মদপুর উপজেলা; চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা, জীবননগর, সদর ও দামুড়হুদা উপজেলা; এবং ঝিনাইদহ জেলার সদর, শৈলকুপা, কোটচাঁদপুর, হরিণাকুন্ড ও কালিগঞ্জ উপজেলা থাকছে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের আওতাভুক্ত এলাকা হিসেবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন করা হলে পল্লী অঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন ও উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় কমবে, একইসঙ্গে জীবনমান উন্নয়ন হবে। তাছাড়া স্থানীয় বাজার ও গ্রোথ সেন্টার গ্রামীণ হাটের সঙ্গে মহাসড়কের যোগাযোগ সহজ হবে। তাতে করে কৃষিপণ্য বিপণন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের ভৌত অবকাঠামো উন্নত হবে। কৃষি ছাড়াও অকৃষি খাতেও স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। সার্বিকভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে প্রকল্পটি ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য বলে মত দেন তিনি।
পরিকল্পনা কমিশনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১৪ মে ইআরডি ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে এই প্রকল্পের ঋণচুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে এ বছরের ২৩ জুন বিশ্বব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নের বিষয়টি অনুমোদন পায়।