কর ফাঁকি দিয়েছে দেড় লাখের বেশি প্রতিষ্ঠান
২৮ নভেম্বর ২০২০ ১০:৪০
ঢাকা: ভুয়া অডিট রিপোর্ট দাখিলসহ নানা উপায়ে কর ফাঁকি দেওয়া এক লাখ ৬০ হাজার কোম্পানিকে শনাক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে নভেম্বর থেকেই। অনিয়মে জড়িত বেশকিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
এর আগে কর ফাঁকি দেওয়া কোম্পানি শনাক্তে গত ২০ আগস্ট টাস্কফোর্স গঠন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইসি। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করতে বলা হয় রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক- আরজেএসসি ও হিসাববিদদের সংগঠন আইসিএবির।
এদিকে এরইমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ( এনবিআর) গোয়েন্দা সংস্থা সিআইসি এরই মধ্যে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে জানতে পেরেছে, ১ লাখ ৭৭ হাজার নিবন্ধিত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে ইটিআইএন আছে মাত্র ৭৮ হাজারের। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রিটার্ন জমা দিয়েছে মাত্র ২৮ হাজার কোম্পানি। আবার এদের প্রায় ১২ হাজারই জমা দিয়েছে ভুয়া অডিট রিপোর্ট।
আর এর কারণ অনুসন্ধানে বেশকিছু কোম্পানিকে তদন্তের আওতায় আনছেন গোয়েন্দারা। পরে করা হবে মামলা। এদিকে ভুয়া অডিট রিপোর্ট শনাক্তে ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন সিস্টেম গড়ে তুলছে হিসাববিদদের সংগঠন- আইসিএবি। সেটা দ্রুতই হবে ফলে ভুয়া রিপোর্ট দাখিল বন্ধ হবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘ট্যাক্স ফাইলসহ সবকিছু ঠিক থাকলে এটা সবার জন্য ভালো। করোনাকালে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে অনেকের ট্যাক্স ফাইল ছিলো না। কিন্তু তারা ব্যবসা করেছে। অপরদিকে ব্যাংকগুলো সবসময় চাই ট্যাক্স ফাইল যেন ঠিক থাকে। আর ঠিক থাকলে ব্যবসা এবং সবদিক থেকে ভালো হয়।’
একইসঙ্গে হিসাববিদদের সংগঠন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমরা চাই কোন ভুল রিপোর্ট যেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা জয়েন স্টকে কেউ জমা দিতে না পারে। যে ডকুমেন্টস একজন চাটার্ড একাউন্টস স্বাক্ষর করেন সেটি একটা কোর্ডিং সিস্টেমে এলে ভালো। তাহলে কেউ আর মিথ্যা তথ্য কোথাও দিতে পারবে না। সেটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’
শুধু তাই নয়, দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ কোম্পানি আয়কর আইন অমান্য করে ব্যবসা করছে। যা সম্প্রতি চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর এদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নিচ্ছে এনবিআর।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইসির পরিচালক মো শাব্বির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অনেক কোম্পানি শনাক্ত করেছি। যারা নানা উপায়ে কর ফাঁকি দিয়ে আসছিলো। এখন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে রাজস্ব আহরণ যেমন বাড়বে একই সাথে কোম্পানি নিবন্ধনও বাড়বে। ফলে স্বচ্ছতা আসবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাংলাদেশে নিবন্ধিত যেসব কোম্পানি টিআইএন গ্রহণ বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করছে না সে সকল কোম্পানি চিহ্নিত করে তালিকা করা ও সব কোম্পানিকে আয়করের আওতায় আনতে টাস্কফোর্স গঠন করে। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের পরিচালক মো. শাব্বির আহমদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টাস্কফোর্স টিম গঠন করা হয়।
টাস্কফোর্সের কর্মপরিধির বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত যেসব কোম্পানি টিআইএন গ্রহণ বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করছে না, সে সব কোম্পানি চিহ্নিত করা, তালিকা প্রণয়ন এবং মাঠপর্যায়ের দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে সব কোম্পানিকে আয়করের আওতায় আনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। জাল অডিট রিপোর্ট দাখিল রোধকল্পে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা প্রণয়ন। কোম্পানি করদাতাদের কর নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল এবং অথেনটিক অডিট রিপোর্ট দাখিল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে তা চিহ্নিত করা এবং সমাধানের বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ করা।
আরও বলা হয়, কোম্পানির টিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিল নিশ্চিতকরণে এবং কর বিভাগের নিকট জাল অডিট রিপোর্ট দাখিল বন্ধে যেসব কার্যক্রম গৃহীত হচ্ছে তা অগ্রগতি মনিটর করে রিপোর্ট প্রদান করা। টাস্কফোর্স যৌথমূলধন কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোম্পানি কারদাতার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে এবং আইসিএবির সঙ্গে যোগাযোগ করে জাল অডিট রিপোর্ট দাখিল বন্ধ করার কর্মপন্থা প্রণয়ন। টিআইএনবিহীন করদাতা চিহ্নিতকরণসহ বিভিন্ন কাজে ডেটা ম্যাচিং ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আইটি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবা উইং এবং আইসিটি উইং টাস্কফোর্সকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া।