Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১ বছরে ২৬ মামলা: মুনিরের বিরুদ্ধে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ


২৮ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৪০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক বছরে ২৬ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে হয়রানির অভিযোগ ওঠা সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে কেডিএস গ্রুপ।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কেডিএস গ্রুপের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা সাবেক কর্মকর্তাকে হয়রানির অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশপাশি পাল্টা আরও কিছু অভিযোগ তোলেন।

বিজ্ঞাপন

কারাবন্দি সাবেক কর্মকর্তা মুনির হোসেন খাঁন কেডিএস গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কে ওয়াই স্টিল মিলের নির্বাহী পরিচালক ও পরবর্তী সময়ে পেইড ডিরেক্টর ছিলেন। কেডিএস গ্রুপের মালিক খলিলুর রহমানের ছেলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানের বন্ধু মুনির হোসেন খাঁন ২০০৭ সাল থেকে কে ওয়াই স্টিল মিলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ২০১৮ সালে পদত্যাগ করেন। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত ২৫ নভেম্বর মুনিরের বাবা চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন অভিযোগ করেন, চাকরি ছাড়ার পর এক বছরে তার ছেলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি অংশকে ব্যবহার করে ২৬টি মামলা দায়ের করে। ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর কেডিএস গ্রুপ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একটি গাড়ি চুরির মামলা দেয়। ওই মামলায় জামিনের জন্য আদালতে উপস্থিত হলে আরও দুইটি ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জেলে পাঠানো হয়। সেই থেকে মুনির জেলে আছে। তার বিরুদ্ধে গত এক বছরে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় পাঁচটি, ঢাকার গুলশান থানায় একটি এবং আদালতে মোট ২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মুনিরের পাশাপাশি তার বাবা-ভাইকেও আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মোয়াজ্জেম আরও অভিযোগ করেন, কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে ইয়াসিন রহমান টিটু (হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত) কে ওয়াই স্টিলের অন্যতম মালিক। কারাবন্দি থাকায় তিনি নিয়মিত জেলখানায় বসে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক নীতিনির্ধারণী সভা করতে থাকেন। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল বিকেলে কে ওয়াই স্টিলের অ্যাকাউন্ট ইনচার্জ ইমরান হোসেন এবং মহাব্যবস্থাপক আব্দুল কালামসহ ১০ কর্মকর্তাকে নিয়ে জেল সুপারের অফিসের পাশে কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত বোর্ড মিটিংয়ে টিটু মুনিরকে মারধর করেন। তখন থেকেই মূলত মুনির কেডিএস গ্রুপের রোষানলে পড়েন এবং চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন ও একের পর এক মামলা দায়ের হতে থাকে।

হয়রানি থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন।

এসব অভিযোগের জবাব দিতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে আহসানুল হক হেনা বলেন, মাসে দুই লাখ টাকা বেতনে চাকরি করে মুনির হোসেন খাঁন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে কোম্পানির মালিককে সবসময় সাফল্যের কথা বলতেন। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানটির ৩০০ কোটি টাকার দায় তিনি হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করেছেন। কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে কোম্পানির বেশি লাভ হচ্ছে বলে দেখাতেন। কোম্পানির হিসাব, বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও কেমিকেল আমদানির পুরো দায়িত্ব তার হাতেই ছিল। তিনি মালিকের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন এবং সকল ক্ষমতার অধিকারী হন।

‘২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি কোম্পানির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে স্ত্রীর জন্য গহনা ও কসমেটিকস কিনেছেন। জেলখানায় বোর্ড মিটিং এবং ইয়াছিন রহমান টিটু তাকে বেদম মারধর করেছেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, এটা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জেল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।’

আইনজীবী হেনা আরও অভিযোগ করেন, মুনির হোসেনের বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ডুয়েল সিটিজেনশিপের চুক্তি নেই। দুই লাখ টাকা বেতনে চাকরি করেও মুনির তার সন্তানদের আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও মালয়েশিয়ান স্কুলে লেখাপড়া করিয়েছেন। তিনি নিজের নামে ফ্ল্যাট ও মেয়ে ইসাবেলার নামে টাওয়ার এবং অ্যালায়েন্স স্টিল ও মেরিনার্স ট্রান্সপোর্ট নামের দুইটি কোম্পানি গড়ে তুলেছেন। আমেরিকায় বাড়ি করেছেন।’

মুনির হোসেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেও এর সপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেননি আহসানুল হক হেনা।

২৬টি মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, ‘কারণ প্রতিটি মামলায় কজ অব অ্যাকশন আছে। বরখাস্তের সময় অঙ্গীকার করেছিল যখন ডাকবে তখন এসে হিসেব বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু তাকে ডাকার পরও সে আসেনি। প্রত্যেক বছরের জন্য একটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশ দুটিতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। পিবিআই, সিআইডি তদন্ত করছে। কোয়াশমেন্ট ও রিটে ১৭টি মামলা নিয়ে হাইকোর্টে যান। যা হাইকোর্ট বাতিল করে দেন। বিচারাধীন মামলাকে কেউ মিথ্যা বলতে পারে না।’

সংবাদ সম্মেলনে কেডিএস’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবির হোসে খান বলেন, ‘মুনির হোসেন খাঁনের অসদুপায়ে অর্জিত কালো টাকা ও মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়ে আমরা মার্কিন দূতাবাসকে জানাব।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেডিএস’র প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রাকিবুল কামাল, কেডিএস গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ডস অ্যান্ড কমিউনিকেশন সাজ্জাদ আল মামুন ও অ্যাডভোকেট সামানজারা খান।

১ বছরে ২৬ মামলা ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাত কেডিএস গ্রুপ সাবেক কর্মকর্তা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর