‘ভাস্কর্য নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে পরিণাম ভালো হবে না’
১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৩৪
ঢাকা: ভাস্কর্যকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে পরিণাম ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, এই সমস্ত অর্বাচীন কথা ও আস্ফালন বন্ধ করুন। তা না হলে বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ রাজপথেই এর জবাব দেবে। তার পরিণাম ভালো হবে না। অতীতেও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান অবমাননার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেফতারসহ ৭ দফা দাবিতে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীতে মানববন্ধন করেছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬০টি সংগঠন। রাজধানীর মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, শাহবাগ মোড়, ছবির হাটের বিপরীত দিক থেকে ঢাকা ক্লাব ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বিপরীত দিকের রাস্তা পর্যন্ত এই মানববন্ধন বিস্তৃত হয়। ওই মানবন্ধনে বক্তৃতা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটা (বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধৃষ্টতা পূর্ণ বক্তব্য) কার ইঙ্গিতে হচ্ছে, এটা কি কারও ব্যক্তিগত খামখেয়ালি না সুপরিকল্পিত পেইড? ভালোভাবে খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা জনগণের সরকার। আমাদের ক্ষমতার উৎস বাংলার জনগণ। আমাদের ক্ষমতার উৎস মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাই কেউ যদি মনে করেন এসব কথা বলে পার পেয়ে যাবেন, স্বাধীনতাকামী মানুষরা কলা গাছ নয়, মান্দার গাছ। কেউ ইচ্ছে করে পিঠ ঘষতে এলে তার পিঠ ছুলে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক ধর্মব্যবসায়ী হয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করবেন, অপব্যখ্যা দেবেন; আর ইসলাম প্রিয় মানুষেরা নীরবে শুধু দেখবে, কিছু বলবে না, এটা তো হতে পারে না। ধর্ম কারও কাছে লিজ দেওয়া হয়নি। কোনো গোষ্ঠীর কাছে লিজ দেওয়া হয়নি। ধর্মের রক্ষক আপনারা কয়েকজন নন। এই দেশের ১৬ কোটি মানুষ যারা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করে তারাই ইসলাম ধর্মের রক্ষক। এবং আমরা বিশ্বাস করি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এরকম ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি প্রত্যাহার করতে হবে। দেখেন নাই ৫২ সালে পাকিস্তানিদের জবাব বাংলার মানুষ কীভাবে দিয়েছিল। ৫৪ সালে ধর্ম ব্যবসায়ীদের জবাব কীভাবে দেওয়া হয়েছিল। ৭০ ও ৭১ সালে জবাব কীভাবে দেওয়া হয়েছিল। দয়া করে ইতিহাস বুঝতে চেষ্টা করুন। ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানান।’
বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী চলছে। আর এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধৃষ্টতা করলেন। সুনির্দিষ্টভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বলার পরও কেউ কিছু বলেনি। আমি মনে করি এটাই আপনাদের সৌভাগ্য। আর এই ধৃষ্টতা দেখাবেন না। দেখালে পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, যারা এসব কথা বলে তাদের বঙ্গেপাসাগরে ডুবিয়ে মারা হবে। প্রয়োজনে এসব মৌলবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে আরেকবার মুক্তিযুদ্ধ করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদের পরাজিত করা হবে।
মানববন্ধনে সূচনা বক্তব্যে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সাংবাদিক আবেদ খান। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদ সদস্য শাহজাহান খান, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ, চিকিৎসক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসানসহ আরও অনেকে।
মানবন্ধনে আরও অংশ নেন যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস, গবেষক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তসহ আরও অনেকে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক ভাস্কর্য মন্তব্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়