অর্থনেতিকভাবে দেশ যত উন্নত হবে, আপনাদের পরিবারগুলো তত উন্নত হবে
৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:২৭
ঢাকা: দেশ ও জাতির প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মনে রাখতে এই দেশ অর্থনেতিকভাবে যত উন্নত হবে, আপনাদের পরিবারগুলোও উন্নত হবে।
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৯৫তম ব্যাচ রিক্রট মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপণী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম সাতকানিয়া বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন ইপিআর সদস্যদের অনবদ্য অবদানের কথাও স্মরণ করে বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার সরকারের মেয়াদে নানামুখি পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা আধুনিক যুগে প্রবেশ করেছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। কাজেই আমাদের বর্ডার গার্ডও সেইভাবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। যাতে করে আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা যেমন করবে পাশাপাাশি চোরাচালান, নারী পাচার, শিশু পাচারসহ যে সমস্ত অপকর্ম বর্ডারে হয় সেগুলো যাতে না হতে পারে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সেদিকে লক্ষ্য রেখে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েছি বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
৯৫তম ব্যাচ রিক্রট মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় মনে রাখতে হবে যে কোনো বাহিনীর জন্য, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য ‘শৃঙ্খলা হচ্ছে সবথেকে বড় বেশি প্রয়োজন’। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাইকে চলতে হবে। বাংলাদেশ একটি আদর্শ নিয়েই কিন্তু স্বাধীন হয়েছে। কাজেই সেই আদর্শ নিয়েই চলতে হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ, কর্তব্য পালনে নির্ভীক থাকতে হবে। আবার অধস্তন যারা তাদের প্রতিও সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর আমাদের দেশটাকে আমরা যেন ভবিষ্যতে আরও উন্নত করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সকলে কাজ করবেন সেটাই চাই।’
প্রশিক্ষণার্থীদের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারণ এটি কঠিন কাজ ছিল করোনাভাইরাস সারাবিশ্বকে স্থবির করে রেখেছে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশটাকেও স্থবির করে রেখেছে। সেই ক্ষেত্রে তারপরও এ ধরনের একটা সমস্যার মধ্যেও ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে।
বিজিবি’কে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের বিশেষ করে বিজিবি’র যে মূলনীতিগুলো সেই নীতিগুলো মনে রাখতে হবে। দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে, ভ্রার্তৃত্ববোধ থাকতে হবে, শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলতে হবে এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কাজেই এই চার মূলনীতিটা আপনারা অবশ্যই মনে প্রাণে পালন করবেন। দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন, সততার সঙ্গে পালন করবেন। কারণ দেশটা আমাদের আপনাদের সকলের। এই দেশ ভালো হবে, আপনারই বাবা মা ভাই বোন যারা তারাই এবং আপনার ভবিষ্যৎ বংশধর তারাই সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে। সেই কথাটা আপনাদের সবসময় মনে রাখতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন (বিডিআর বর্তমান বিজিবি) তৃতীয় রিক্রুট ব্যাচ সমাপনী কুচকাওয়াজে দেওয়া বক্তব্যের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বলেছিলেন,‘‘আজ আপনাদের কাছে আমি অনেক বড় কর্তব্য দিয়েছি। অনেক বড় কাজ দিয়েছি। এ কাজ হল চোরাচালানি বন্ধ করা, তোমাদের কাছে আমার হুকুম স্মাগলিং বন্ধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তোমরা পারবা। এই বিশ্বাস তোমাদের উওপর আমার আছে। আশা করি তোমরা স্মরণ রাখবা মনে রাখবে হবে স্মাগলারের কোন জাত নাই ধর্ম নাই তারা মানুষ নামের নরপশু। তারা এদেশের সম্পদকে বিদেশে চালান দেয় সামান্য অর্থের লোভে।”
‘কাজেই এখানে কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একটা নির্দেশনা রয়েছে। আশা করি এই নির্দেশনাটাও আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের যেমন সার্বভৌমত্ব রক্ষা, স্বাধীনতা রক্ষা পাশাপাশি এই ধরনের অপকর্মগুলি রোধ করায় আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। কারণ এই কথাগুলো এখনও প্রাসঙ্গিক, এটাই শুধু আমি বলতে চাই’ বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ ও জাতির প্রতি একটা সেবার মনোভাব নিয়ে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে হবে। দেশকে ভালবাসতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মনে রাখতে এই দেশ অর্থনেতিকভাবে যত উন্নত হবে, আপনাদের পরিবারগুলোও উন্নত হবে।’
দেশের দারিদ্র্যের হার কমানো থেকে শুরু বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি মুজিববর্ষে সরকারের সিদ্ধান্ত একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না, তাদের একটি ঠিকানা হবে এবং দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরেই বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে সেই প্রত্যয়ও পুনর্ব্যক্ত করেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যাবো। বাংলাদেশ হবে জাতির স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ অবশ্যই আমরা সেটা করতে সক্ষম হব।’
শীতের প্রকোপ বাড়ছে, ইউরোপসহ বিভিন্ন অনেক দেশে ব্যাপকভাবে করোনা আবার সংক্রামিত হচ্ছে নতুনভাবে। আপনারা প্রত্যেকে নিজে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। সাথে আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত থাকার নির্দেশ দেবেন। স্বাক্ষ্যবিধি মেনে চলবেন যেন করোনাভাইরাসে আমাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
আমাদের দেশের মানুষ সুরক্ষিত থাকুক, সুস্থ থাকুক, ভাল থাকুক উন্নত জীবন পাক, সুন্দর জীবন পাক, সেটাই জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল আমারও সেটা লক্ষ্য। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে আমরা আগামী দিনে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলব বলে দৃঢ় অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী।