Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, ফুটপাতে নির্ঘুম রাত গৃহহীনদের


৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:১৫

সিরাজগঞ্জ: সন্ধ্যা গড়ালেই বাড়ছে কুয়াশা, পুরো সকালেই থাকছে শীতের দাপট। শীতল হাওয়ায় দুপুরেও তেজহীন সূর্য। বিত্তবানদের কাছে উপভোগ্য হলেও গৃহহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে দুর্বিষহ। সারাদিন নানা কাজ শেষে রেলওয়ে স্টেশন, খোলা মাঠ, বাসা-বাড়ি ও অফিস-আদালতের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া এসব উদ্বাস্তু মানুষেরা শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন ও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। শীত থেকে রেহাই পেতে অনেকেই পলিথিন টাঙিয়ে রাস্তার পাশে শুয়ে-বসে আছেন। কেউ বা আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

বিজ্ঞাপন

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের পুরাতন জেলখানা ঘাট এলাকার নুর-জাহান বেগম (৪০) ও স্বামী ঝন্টু শেখ (৪৮) বলেন, প্রায় ১৬ বছর আগে আমরা দুই জন পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাতাম। দুই জনের রোজগারে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু আমাদের ভালো থাকাটা বেশিদিন ধরে রাখতে পারি নাই।

হঠাৎ করে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কের কড্ডার মোড় এলাকায় বাসের নিচে পড়ে স্ত্রী নুর-জাহানের একটি পা কাটা পড়ে। টাকা-পয়সা তেমন না থাকায় স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে চলতে হতো। চলতে চলতে স্ত্রী ও মেয়ে শিল্পী খাতুনকে (১৪) নিয়ে এখন ঠাঁই জুটেছে রেলওয়ে স্টেশনে। ঝন্টু শেখ বলেন, এখানেই রাত কাটাই। শীতের এই রাতে পঙ্গু স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্ট করছি।

কেবল ঝন্টু শেখ ও তার স্ত্রী নুর-জাহানই নয়, সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে এমন ফুটপাতে দিন কাটাতে হয় অনেক মানুষকে। তাদের কেউ অনেকদিন আগে কাজের খোঁজে এসেছিলেন শহরে, স্থায়ী কোনো আশ্রয় গড়তে পারেননি। আবার অনেকেই নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। নদীতে ভিটেমাটি হারিয়ে এখন উদ্বাস্তু হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

তাদের মতোই একজন বাজার স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ভিক্ষুক ফুল ভানু (৯৫)। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই বৃদ্ধা বলেন, প্রায় ৪৫ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। যমুনা নদীতে বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে যাওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে শহরে আসি। কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিল না। রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে জায়গা নিয়েছিলাম। প্রায় ২০ বছর ধরে এখানেই আছি।

তিনি আরও বলেন, গরমের সময় এখানে থাকতে তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। তবে শীতকালে খুব কষ্ট হয়। গত কয়েকদিন অনেক ঠান্ডা পড়েছে। ঘুমানোই যাচ্ছে না। ঠান্ডা বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। ঠান্ডার কারণে এই বয়সেও মাঝরাতে বসেই রাত পার করতে হয়। জানালেন, সারাদিন ভিক্ষা করে কোনো রকমে খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছেন।

বিজ্ঞাপন

বাজার এলাকায় থাকেন আনিছুর রহমান। ঘরবাড়ি নেই। শীতে কাঁপতে কাঁপতে আনিছুর বলেন, সকালে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত শীত বেশি থাকে। কোনো ধরনের কাপড়-চোপড় নাই। একটা সোয়েটার আছে। তা দিয়ে শীত মানে না।  সারারাত বসে ঝিমিয়ে ঝিমিয়েই কাটিয়ে দিই।

শহরের এখানে-ওখানে উদ্বাস্তু, গৃহহীন এমন অনেক মানুষ থাকলেও তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-পরিসংখ্যান নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ কথা স্বীকার করে নেন। সুনির্দিষ্ট তালিকা না থাকার পেছনে তারা নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার কথা জানান। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন মানুষদের জন্য সহায়তা হিসেবে শীতবস্ত্রের সংস্থান রয়েছে বলে জানান তারা।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা চলছে। আমরা প্রতিবছরই এমন মানুষদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকি। এবারও করছি। একইসঙ্গে তিনি শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতিও আহ্বান জানান।

জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি অবশ্য স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সচেষ্ট। তবে এ বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তাদের তৎপরতা তুলনামূলকভাবে কম।

ফুটপাতে ঘুম সিরাজগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর