চিঠিতেও সরছেন না অধ্যক্ষ, কলেজের এমপিও বাতিলের শঙ্কা!
৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:১৪
ঢাকা: চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরও চেয়ার ছাড়ছেন না ঢাকার ডেমরা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুস মোল্লা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তিনি তোয়াক্কা করছেন না। শেষ পর্যন্ত শিক্ষা অধিদফতর থেকে কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও তিনি স্বপদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এদিকে অধ্যক্ষের কারণে কলেজের এমপিও বাতিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষক এবং অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক রোববার (৬ ডিসেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, গত পাঁচ মাস থেকে কলেজের সকল স্টাফদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। কারণ শিক্ষা অধিদফতর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অধ্যক্ষ ইউনুস মোল্লার সইয়ে টাকা দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কোন ক্ষমতাবলে উনি চেয়ার রয়েছেন তা বুঝতে পারছি না।
ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ ইউনুস মোল্লার চাকরির বয়স ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। সরকারি আদেশ অনুযায়ী ওইদিনই তার অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি গত এক বছর ধরে চেয়ার আকড়ে রয়েছেন। শিক্ষা অধিদফতর থেকে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠালেও তিনি সেসব চিঠিকে পাত্তাই দেননি।’
জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষক বলেন, ‘চাকরির বয়স শেষের দিকে আসায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে নিজের লোক বসিয়েছেন। সেই সভাপতি আব্দুল জলিল ২০১৯ সালের নভেম্বরে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছর চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে আনেন।’
সরকারি আদেশ অনুযায়ী চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোনো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে গভর্নিং বডি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবে অধ্যক্ষ ইউনুস মোল্লার চাকরির মেয়াদ বাড়াতে পারেন না।
মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, ‘চাকরির বয়স ৬০ বছর হয়ে গেলে কাউকে পুনঃনিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না, সেটি জানা ছিল না। এমনকি অধ্যক্ষ সাহেবও গোপন রেখেছিলেন। তাই আমরা এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করেছিলাম। সেই অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক বছর মেয়াদ বাড়িয়েছিল।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. মনিরুজ্জামানকে এ বিষয়ে জানতে রোববার (৬ ডিসেম্বর) ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
দফায় দফায় চিঠি পাঠিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল কাদের। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডেমরা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউুনস মোল্লার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। এরপরেও তিনি স্বপদে বহাল আছেন। স্থানীয় প্রশাসন আছে, সংসদ সদস্য আছেন, গভর্নিং বডি আছে তারা বিষয়টি দেখবেন। অধিদফতর থেকে চিঠি দিতে দিতে সবশেষ বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপরেও যদি না সরেন তাহলে আমরা কিছু সুপরিশ দিয়েছি। সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে কলেজের এমপিও থাকবে নাকি বাতিল হবে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার এক বছর চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছে- সেটি কি সঠিক ছিল?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি গেজেট ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইন অনুযায়ী ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কেউই কাউকে পুনঃনিয়োগ বা মেয়াদ বাড়াতে পারেন না। সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। আর ওই মেয়াদও শেষ হয়েছে। এখন তাকে সরতেই হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় (ঢাকা-৫) সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেমরা কলেজের বিষয়টি আমি জানি। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। আগামী বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) আমি কলেজে যাব। তার পরিবর্তে শিক্ষা অধিদফতরের সুপারিশ অনুযায়ী আপাতত সর্বোচ্চ সিনিয়র শিক্ষককে অধ্যক্ষের পদে বসিয়ে আসব। কারণ, কলেজের বেতন পাঁচ মাস ধরে বন্ধ। আর কতদিন চলবে এভাবে। এভাবে চলতে পারে না। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
৬০ বছর পূর্ণ অধ্যক্ষ এমপিও বাতিল কলেজ চাকরির বয়স চিঠি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডেমরা কলেজ