‘ব্ল্যাকমেইল’ থেকে বাঁচতে দেবরকে খুন
৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে আত্মীয়ের বাসা থেকে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মাধব দেবনাথ নামে ওই যুবককে খুন করেছে তার মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী বীথি দেবনাথ। বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক গড়ে ওই যুবক বীথিকে ফাঁদে ফেলে দেন। বিশেষ মুহূর্তের ছবি পৌঁছে দেন ফেসবুকের মাধ্যমে তার স্বামী পিন্টু দেবনাথের কাছে। ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে ওই নারী মাধবকে বাসায় ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্কের কৌশলে খুন করে। পরে সেই মৃতদেহ দুদিন খাটের নিচে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপনও করেন।
হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বীথি দেবনাথ রোববার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরওয়ার জাহানের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাধবের মৃতদেহ উদ্ধারের পর আমরা মোট ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছিলাম। বীথি আমাদের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে পুরো ঘটনা খুলে বলেছে। এরপর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বাকি পাঁচজনকে ছেড়ে দিই। বীথি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের দায় স্বীকার করেছে।’
গত শুক্রবার রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার টেরিবাজার আফিমের গলির একটি বাসা থেকে মাধবের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাসাটি তার মামাতো ভাই পিন্টুর। এরপর ওই বাসা থেকে পিন্টু ও তার স্ত্রী বীথি, দুই ভাই, মা-বাবাসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল পুলিশ।
মৃত মাধব দেবনাথের (২৪) বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তিনি টেরিবাজারের পাশের এলাকা স্বর্ণের বাজারখ্যাত হাজারী লেইনে একটি গহনা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। একই কারখানায় কাজ করতেন মাধবের মামাতো ভাই পিন্টু দেবনাথ।
পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, একই বাসায় পিন্টু ও তার স্ত্রী, ছোট দুই ভাই এবং মা-বাবা থাকেন। আর মাধব থাকতেন লালদিঘীর পাড়ে একটি ব্যাচেলর বাসায়। ২০১৮ সালে পিন্টু ও বীথির বিয়ে হয়। বাসায় আসা-যাওয়ার সুবাদে মাধবের সঙ্গে বীথির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। গত জুনে ১০ হাজার টাকা পাওনা নিয়ে মাধব ও পিন্টুর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। এর ফলে মাধবের ওই বাসায় আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
ওসি মহসীন বলেন, ‘বাসায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও বীথির সঙ্গে মাধবের ইমোতে যোগাযোগ ছিল। ইমোর মাধ্যমে মাধব বীথির কাছ থেকে তার বিশেষ মুহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে নেয়। এরপর সেগুলোকে পুঁজি করে বারবার শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ দিতে থাকে।’
পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে বীথিকে হুমকি দেয় মাধব। এরপরও বীথি তাকে বাসায় যেতে দিতে রাজি না হওয়ায় মাধব ফেসবুক ফেক আইডি খুলে সেখান থেকে পিন্টুর ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও ও ছবি পাঠায়। এতে মানসিক চাপে পড়ে যান বীথি। স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। একপর্যায়ে বীথি আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে।
বীথির জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি জানান, ২ ডিসেম্বর (বুধবার) রাতে টেরিবাজারে আগুন লাগার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বীথির স্বামী ছিল কারখানায়। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও দুই দেবর বাসার দরজা খোলা রেখে যান অগ্নিকাণ্ড দেখতে। বীথি একা ছিলেন বাসায়। অন্ধকারের সুযোগে মাধব গিয়ে ওই বাসায় একেবারে বীথির কক্ষে ঢুকে পড়েন। সেখানে বীথি তাকে দেখে চমকে ওঠে।
ওসি মহসীন বলেন, ‘বীথি ভাবলেন, সে আত্মহত্যা করলেও মাধব তার ছবি-ভিডিও সবাইকে দেখিয়ে তাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করবে। বেঁচে থাকলেও সারাজীবন ঝামেলা পোহাতে হবে। তার চেয়ে মাধবকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়াকেই উত্তম ভেবে শারীরিক সম্পর্কের নাটক করে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হাত-পা বেঁধে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে তাকে খুন করে মৃতদেহ রেখে দেয় খাটের নিচে।’
ওসি জানান, মৃতদেহ খাটের নিচে রেখে বীথি বুধবার রাতে ঘুমান। পরদিন স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করেন। শুক্রবার দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর তার শ্বাশুড়ি দুর্গন্ধ টের পান। সন্ধ্যার দিকে পিন্টু বাসায় ফিরে খাটের নিচে মোবাইলের আলো জ্বেলে দেখতে পান, মৃতদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা সারাবাংলা বলেন, ‘একটি অবৈধ সম্পর্ক গড়ার ভুলের জের টানতে হল দুজনকে। মাধবকে প্রাণ দিতে হয়েছে। বীথির জীবন তছনছ হয়ে গেছে।’