Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে একাত্তরের অসমাপ্ত লড়াই শেষ করার ডাক


৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে অসমাপ্ত লড়াই শেষ করার ডাক দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর এবং শিল্পের ওপর মৌলবাদী হুমকির প্রতিবাদে সোমবার (৭ ডিসেম্বর) নগরীর চেরাগির মোড়ে প্রতিবাদে শামিল হন বিশিষ্টজনেরা। সচেতন নাগরিক সমাজ ও সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীর ব্যানারে এই সমাবেশ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘আজ যারা ভাস্কর্য ভাঙচুর করছে তারা নতুন অপশক্তি নয়, এরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি। এরা শহীদ মিনার নির্মাণকে হিন্দুয়ানি আখ্যা দিয়েছিল। এরাই মুক্তিযুদ্ধকে মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে ভারতের ষড়যন্ত্র বলেছিল। এরা ছবি তোলা হারাম বলেছিল। আবার তারা ছবি তুলে হজে যায়। এরা ধর্ম ব্যবসায়ী। ধর্মের নামে ক্ষমতার রাজনীতি করে।’

সরকারের একাংশ এই অপশক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এরা বর্তমান সরকারের কোনো কোনো মহল থেকে প্রশ্রয় পেয়েছে। এই প্রশ্রয় পেয়ে তারা এতটাই বেপরোয়া হয়েছে যে, তার আজ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হাত দিয়েছে। তাদের এই অপকর্মের প্রতিবাদ জানাই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।’

আবুল মোমেন আরও বলেন, ‘এরা ওয়াজের নামে সংখ্যালঘুদের, নারীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। এমনকি নারী শিক্ষার প্রতীক বেগম রোকেয়াকে অসম্মান করে। এতদিন সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আজ মানুষ জেগে উঠেছে। মানুষের জাগরণকে মূল্য দিতে হবে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইটা সম্পন্ন করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যাদের আনুষ্ঠানিক পরাজয় ঘটেছে, স্বাধীন বাংলাদেশে এই পরাজিত শক্তির রাজনীতিকে নির্মূল করা হয়নি। নানা কূটচালে তারা পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তৎপর রয়েছে। ১৯৯১, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব চালিয়েছে। এখনো কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’

‘আজ স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তীতে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে গ্রাস করতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিভাজনের সুযোগে তারা এই ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। আর পেছনে ফিরে থাকার সুযোগ নেই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলাম, সেভাবে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে। যদি দাঁড়াতে না পারি তাহলে আমাদের বিপর্যয় অনিবার্য’-বলেন রানা দাশগুপ্ত।

গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার বলেন, ‘সরকারের দুই মন্ত্রী এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে মদদ দিয়েছে। তারা আজ মাথাছাড়া দিয়েছে। আজ গোষ্ঠীটিকে সামলাতে পারছে না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধের এই পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

সংস্কৃতিকর্মী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসাইন কবীর, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা, খেলাঘর সংগঠক রোজী সেন, শিল্পী শ্রেয়সী রায়, নাট্যজন অসীম দাশ, তাসকিয়াতুন নূর, আইনজীবী রেহানা কবির ও ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।

‘বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ও শিল্পবিরোধী সাম্প্রদায়িকতা গোষ্ঠীর অপতৎপরতা রুখে দাঁড়ান’ শীর্ষক স্লোগানে আয়োজিত সমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা নিজ নিজ ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন।

সমাবেশ সংহতি জানায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সম্মিলিত আবৃত্তি পরিষদ- চট্টগ্রাম, প্রমা ও কণ্ঠনীড়সহ বিভিন্ন সংগঠন।

ভাঙচুর ভাস্কর্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর