Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১০ ডিসেম্বর ১৯৭১— বোমা-রকেটে বিধ্বস্ত কুর্মিটোলা বিমানবন্দর


১০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:০৮

ঢাকা: ১৯৭১ সালের এই দিন রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের বেশিরভাগ জেলা শত্রুমুক্ত হয়ে যায়। ঢাকায় চূড়ান্ত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে যায় যৌথ বাহিনী। ঢাকায় চলছে কারফিউ আর ব্ল্যাক আউট। এদিকে, মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় রেডিও ঢাকা কেন্দ্র স্তব্ধ হয়ে যায়। বোমা-রকেট ছুঁড়ে বিধ্বস্ত করে দেওয়া হয় ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর।

একাত্তরের এদিন ময়মনসিংহের দামাল ছেলেরা নিজ জেলাকে মুক্ত করেন। একই দিনে পাকবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে মাদারীপুর, ভোলা ও নড়াইলকে শত্রুমুক্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে কথা হয় ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আইয়ূব আলীর সঙ্গে। বর্তমানে লংগাইর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তিনি।

বিজ্ঞাপন

একাত্তরের এ দিনের স্মৃতি হাতরে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ূব আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর রাতে পাক বাহিনী স্পেশাল ট্রেন নিয়ে গফরগাঁও থেকে পালিয়ে যায়। তারা রাজাকারদের রেখে চলে যায়। ৯ ডিসেম্বর গফরগাঁও মুক্ত হয়। ১০ ডিসেম্বর আমরা ছিলাম দত্তেরবাজার ক্যাম্পে। ৪৫০ জন রাজাকারকে সেখানে জড়ো করা হয়। সেদিন ভোর থেকে আমরা রাজকার নিয়ে ব্যস্ত।’

সাড়ে চারশ রাজাকার হত্যার তথ্য জানিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘লামকাইলের আমজাদ স্কুলে তাদের জড়ো করি। সেখানে পাঁচ থেকে ছয় জন করে রাজাকারকে রশি দিয়ে বেঁধে ব্রহ্মপুত্র নদে দাঁড় করাই। উত্তেজিত জনতা তখন বাঁশ দিয়ে তাদের পেটাতে থাকে। পরে আমরা সারিবদ্ধভাবে তাদের গুলি করে মারি। এভাবে সেদিন প্রায় সাড়ে চারশ রাজাকারকে হত্যা করা হয়। দুইশ গজ পর্যন্ত নদী রাজকারের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহম্মেদ মৃধা সারাবাংলাকে বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর শৈলকুপা পাক হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়। তখন ১৪ জন আর্মি আমাদের কাছে ধরা ছিল। আমরা তাদেরকে মিত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি। তাদের নিয়ে প্রথমে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে রাখা হয়, পরে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাজাকারদেরকেও মিত্র বাহিনীর কাছে আমরা হস্তান্তর করি।’

সারাবাংলাকে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘শৈলকুপা বিজয়ের পরে আমরা ওয়াপদা অফিসের নিয়ন্ত্রণ নিই। সেখানে থেকে আমরা শৈলকুপা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকি। ১০ তারিখের দিকে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই গ্রামে ফিরে যেতে থাকি। অনেকেই বাইসাইকেলে যাই। বাইসাইকেলের সামনে জাতীয় পতাকা। গ্রামের মানুষ রাস্তার দুই পাশে এসে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছিল। গ্রামে বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে পরে আবার আমরা ক্যাম্পে ফিরে যাই। সেখানে পরে অস্ত্র জমা দিই।’

ইতিহাসের তথ্য বলছে, একাত্তরের এ দিন দিবাগত রাতে দৈনিক ইত্তেফাকের বিশিষ্ট সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন, পিপিআই সংবাদ সংস্থার প্রধান সংবাদদাতা নিজামউদ্দিন সৈয়দ নাজমুল হককে আলবদর-আলশামস বাহিনীর খুনিরা তাদের নিজ নিজ বাসভবন থেকে অপহরণ করে। এরপর এ তিন জনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিন হেলিকপ্টার ও স্টিমারে মেঘনা নদী পেরিয়ে যায় মিত্র বাহিনী। ভৈরব বাজারের ঘাঁটি থেকে সেনারা সোজা ঢাকার দিকে এগোচ্ছিলেন। সম্মিলিত বাহিনীর গোলার মুখে পাক হানাদার বাহিনী মেঘনার তীরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অগ্রগতি রোধ করতে পারেনি। বাইরে থেকে পাকিস্তানি হানাদাররা যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে, সেজন্য নদীপথে তাদের যতগুলো স্টিমার-গানবোট এগোনোর চেষ্টা করেছে, মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় সেসবের সলিল সমাধি হয়েছে।

এদিকে যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল নিয়াজি পালানোর পাঁয়তারা করে। তার এ গোপন অভিসন্ধি বিবিসি ফাঁস করে দেয়। নিয়াজি নিজ দুর্বলতা ঢাকার জন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দম্ভভরে বলেন, ‘কোথায় বিদেশি সাংবাদিকরা-আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনো আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না।’

অন্যদিকে মিত্র বাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটি জাহাজ ভর্তি পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে। সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রু বাহিনীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিমানবন্দর বোমা-রকেটে বিধ্বস্ত কুর্মিটোলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর