রেলপথে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব কমে অর্ধেক হবে
১০ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:২০
ঢাকা: পদ্মাসেতুর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মার দুপাড়ের যোগসূত্র স্থাপন হলো। পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো বহুল আলোচিত এই সেতু। বাকি শুধু সড়ক ও রেলপথে স্ল্যাব বসানোর কাজ। সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলেই ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথ দূরত্ব অর্ধেক হয়ে যাবে। রাজধানীর সঙ্গে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। যশোরের সঙ্গে কমবে ১৮৪ কিলোমিটার। দুই পাড়ে এই রেলপথের দূরত্ব হবে ১৭২ কিলোমিটার।
রেলপথটি ঢাকা থেকে বের হয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরের ভেতরে দিয়ে খুলনায় যাবে। বরিশাল এবং পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হবে। ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের প্রায় ২২ কিলোমিটার হবে সেতুর মতো এলিভেটেড আকারে। এলিভেটেড ভায়াডাক্টের ওপর দুটি প্ল্যাটফর্ম, একটি মেইনলাইন, দুটি লুপ লাইনসহ রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও লিফট স্থাপন করা হবে। প্রায় ১১ মিটার উঁচু রেললাইনের নিচে দিয়ে সড়কের জন্য আন্ডার পাস থাকবে।
আরও পড়ুন-
- বিস্ময়-বৈচিত্র্যে অনন্য পদ্মাসেতু
- ‘বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা পারি’
- নদীর গভীরতা-খরস্রোত— সব চ্যালেঞ্জ উৎরেই পদ্মাসেতু
- ৪ ধরনের ভয়াবহ ধাক্কা-দুর্যোগ সামলাতে সক্ষম পদ্মাসেতু
- পদ্মার বুকে বিস্ময়, শেষ স্প্যানে দৃশ্যমান পূর্ণাঙ্গ ৬.১৫ কিমি পদ্মাসেতু
এই রেলপথে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৪টি স্টেশন হবে। এগুলো হলো- কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা, নাগরকান্দা, মোকসেদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল, পদ্মাবিলা এবং জামদিয়া। দোতলা ট্রেনও এই রেলপথে চলতে পারবে।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, ২০২১ সালে পদ্মাসেতু চালুর দিন কেবল ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতু দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত আসবে ট্রেন। এই অংশের নির্মাণ তখন শেষ হবে।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প সূত্র জানায়, এই রেললাইনের মাধ্যমে দেশে ব্যালাস্টবিহীন রেললাইন নির্মাণ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে এলিভেটেড রেললাইন নির্মাণও শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা-যশোর যে রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে, সেটি হবে দেশের প্রথম ব্যালাস্টবিহীন এলিভেটেড রেললাইন। এতে বুলেট ট্রেন চলতে পারবে। নির্মাণের পরবর্তী ৬০ বছর মেরামতের প্রয়োজন পড়বে না। সেতুর ভেতর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের গতি হবে ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার। আর মালবাহী ট্রেন ১২৫ কিলোমিটার গতিতে চলবে।
রেলপথটির প্রথম সেকশন কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া হবে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন, দ্বিতীয় সেকশন হবে গেন্ডরিয়া থেকে মাওয়া ৩৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ব্রডগেজ। যেখানে থাকবে চারটি স্টেশন। তৃতীয় সেকশন হবে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশন সিঙ্গেল ব্রডগেজ লাইন ৪২ কিলোমিটার। যেখানে থাকবে পাঁচটি স্টেশন, চতুর্থ সেকশন হবে ভাঙ্গা থেকে রুপদিয়া এবং পদ্মাবিলা হয়ে সিংগিয়া স্টেশন ৮৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল ব্রডগেজ লাইন। যেখানে ১০টি স্টেশন পড়বে।
এই রেলপথ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নতুন রেলকোচ কেনা। প্রকল্পের টাকায় ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী ট্রেন কেনা হবে। যার চারটি কোচ হবে এসি স্লিপার, ১৬টি এসি চেয়ার, ৫২টি শোভন চেয়ার, ১৮টি শোভন চেয়ার এবং ১০টি অন্যান্য কোচ। দেশের যোগাযোগ খাতে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে বাংলাদেশ সরকার ১৮ হাজার কোটি ও চীন জি টু জি ভিত্তিতে ২১ হাজার কোটি টাকা অর্থ সহযোগিতা দিচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পটি দেরিতে শুরু হওয়ায় এখনো অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।