‘চরম মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা’
১১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:১১
মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা চরম মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে দাবি করেছে মিয়ানমারভিত্তিক স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থা ফোরটিফাই রাইটস।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নতুন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
How does #genocide affect the #mentalhealth of survivors? Download @FortifyRights new report “The Torture in My Mind” to learn about the mental health crisis for #Rohingya survivors & how to solve it. https://t.co/HSmVYxEjmx
— Fortify Rights (@FortifyRights) December 10, 2020
এ ব্যাপারে ফোরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। অথচ, এ বিষয়টি নিয়ে কোনো তোড়জোড় নেই। যে কোনো মুহুর্তে বহু রোহিঙ্গা এর কারণে দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশিতাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনের ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে মনযোগী হতে হবে।
এদিকে, ফোরটিফাই রাইটসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ৮৮.৭ শতাংশের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ রয়েছে, ৬১.২ শতাংশের মধ্যে রয়েছে দুর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক বৈকল্য (পিটিএসডি)।
এর আগে, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন।
২০১৮ সালের মার্চ থেকে এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে এই গবেষণা কার্যক্রম চালায় ফোরটিফাই রাইটস। ৯৯ পাতার ওই গবেষণা প্রতিবেদনের নাম দেওয়া হয়েছে – দ্য টর্চার ইন মাই মাইন্ড: দ্য রাইট টু মেন্টাল হেলথ ফর রোহিঙ্গা সারভাইভার অব জেনোসাইড ইন মিয়ানমার। এই গবেষণায় তারা দেখিয়েছেন কীভাবে গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সহিংসতা একটা জনগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব রেখে যায়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯৭.৬ শতাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী রাখাইনের ওই সেনা অভিযান নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নের মধ্যে তারা গুলির আওয়াজ শোনেন আর নিজেদের ঘরবাড়ি পুড়ে যেতে দেখেন। তাদের মধ্যে, ৮২.২ শতাংশ আবার ওই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে থাকেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ৯৮.৬ শতাংশ রোহিঙ্গা গোলাগুলির ভেতর দিয়ে পালিয়ে এসেছন, ৯৭.৮ শতাংশ নিজেদের ঘরবাড়ি পুড়ে যেতে দেখেছেন। ৯১.৮ শতাংশ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন, ৯০.৪ শতাংশ দেখেছেন অন্যদের নির্যাতিত হতে।
এছাড়াও, ৮৬.২ শতাংশ অল্প পরিচিত কাউকে না কাউকে সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারাতে দেখেছেন, ৭০.৬ শতাংশ ওই অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা বা লুকিয়ে থাকার সময় পরিবারের কোনো না কোনো সদস্যের মৃত্যু দেখেছেন। ২৯.৫ শতাংশ দেখেছেন পরিবারের কোনো না কোনো সদস্যকে হত্যা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, জরিপে অংশ নেওয়া আট রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৭.৬ শতাংশ জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছিল।
পাশাপাশি, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৯৮ শতাংশ রোহিঙ্গা মনে করেন রাখাইনে হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ এবং শারীরিক নির্যাতনের সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জড়িত।