Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণফোরামের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটে গেছে: কামাল হোসেন


১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:৪৭

ড. কামাল হোসেন, ফাইল ছবি

ঢাকা: গণফোরামের মীমাংসা হয়েছে ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটে গেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) ড. কামাল হোসেন এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান।

বিবৃতিতে ড. কামাল হোসেন জানান, সম্প্রতিকালে গণফোরামের অভ্যন্তরে ভুল বুঝাবুঝির কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ভূত সমস্যার সমাধানকল্পে সকল সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে দলের অভ্যন্তরে যে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কার হয়েছে তা অকার্যর বলে গণ্য হবে।

গণফোরামে ‘জটিলতা’ কাটেনি, ড. কামালকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম

এ বিষয়ে দলেন নেতাকর্মীরা জানান, গণফোরামের উভয় গ্রুপের নেতারা বিভেদ ভুলে আবারও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে একমত হয়েছেন।

এ বিষয়ে গণফোরাম নেতা আ্যাডভোকেট সুব্রতচৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ড. কামাল সাহেবের এই বিবৃতির মধ্যদিয়ে জিইয়ে থাকা দলের অভ্যন্তরীণ জটিলতা আপতত নিরসন হলো।’ তিনি বলেন, ‘এই বিবৃতিতে প্রমাণ হয়েছে ড. কামাল হোসেন নিরপেক্ষ। ড. কামাল হোসেনকে ধন্যবাদ জানাই বিবৃতির জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘দলটির মধ্যে আরও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’

গণফোরাম নেতা লতিফুলবারী হামিম বলেন, ‘গণফোরামে বিরাজমান সমস্যা সমাধান হয়েছে। আমরা গণফোরামের শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রতাশ্যা করছি, গণফোরাম তার নিজস্ব আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করবে।’

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ জানান, ‘রাজনৈতিক শূন্যতার সময় গণফোরাম ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এটি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। জাসদ, বাসদ হেফাজত ভেঙে। তাই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ড. কামালের নেতৃত্বে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।’

প্রতিষ্ঠাতার ২৭ বছর পর দলটিতে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার আল্টিমেটামের মধ্য দিয়ে যে অভ্যন্তরীণ বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছিল। গত ১৭ অক্টোবর এক সভায় দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আট নেতাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন ড. রেজা কিবরিয়া। এই আট নেতা হলেন— মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, হেলালউদ্দিন, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরী।

মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বে মূলত কেন্দ্রীয় এই নেতাদের অনুসারীদের নিয়েই গণফোরামে বিভক্তি দেখা দেয়। আরেক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন ড. রেজা কিবরিয়া। দুই পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি কাউন্সিলও ডাকা হয়েছিল। পরে ড. কামাল হোসেনের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়। সে কারণেই দুই অংশের পৃথক কাউন্সিল স্থগিত করে একটি কাউন্সিলের মাধ্যমেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন গণফোরামের দুই অংশের নেতারাই।

এরকম একটি পরিস্থিতিতে মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশের দাবি, তাদের যেসব নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে সেই বহিষ্কারাদেশ বাতিলের ঘোষণা দিতে হবে ড. কামালকে। গতকাল শনিবার দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গ দু গ্রুপের বৈঠকে বিভদে ভুলে দলটি সামনে এগিয়ে যাওযার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় পক্ষের নেতারা। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠিক কারার জন্য আগামী শনিবার উভয় গ্রপ ঐক্যবদ্ধ ভাবে বৈঠক করবে। আর দলের ঐক্য অটুটের বিষয়টি জানান দিতে আগামীকাল রোববার দলের পক্ষে ড. কামাল হোসেন পত্রিকায় বিবৃতি দেওয়ার কথা ছিল। সেই বিবৃতি ড. কামাল হোসেন আজ রোববার প্রদান করেন।

এর আগে, গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের পর থেকেই মূলত গণফোরামের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিতে থাকে। এই কোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছায় এ বছরের মার্চের শুরুর দিকে। গত ২ মার্চ দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ চার কেন্দ্রীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এই চার নেতা হলেন— সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন ও লতিফুল বারী হামিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খান সিদ্দিকুর রহমান এবং প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল হাছিব চৌধুরী। পরদিন ৩ মার্চ ওই বহিষ্কৃত চার নেতা বহিষ্কার করেন দলের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, সহসভাপতি মহসীন রশীদ ও সহসভাপতি শফিকউল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ মোস্তাককে।

পাল্টাপাল্টি এই বহিষ্কারের পর ৪ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরামের চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। নিজেকে আহ্বায়ক ও আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে সম্পাদক রেখে ওই বিজ্ঞপ্তিতে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। পরে ১২ মার্চ পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করেন তিনি। ওই সময়ও দলের একাংশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অগণতান্ত্রিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ড. কামাল হোসেনকে ২ সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেন। পরে অবশ্য দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে গণফোরামের উভয় পক্ষের রাজনৈতিক তৎপরতাও স্থবির হয়ে পড়ে। বর্ধিত সভার ঘোষণায় ফের সেই স্থবির দশা কাটতে যাচ্ছে।

বিভেদ ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গণফোরাম নেতাদের

কামাল হোসেন গণফোরাম টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর