উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় যুবক গ্রেফতার
১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে দুই বন্ধু মিলে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর ওই আসামি ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর মাস্টার লেইন এলাকা থেকে আকবর শাহ থানা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের কর্মকর্তারা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার রাকিবুল হাসান আরিয়ান (২০) নগরীর আকবর শাহ থানার জানারখিল আরিফ চৌধুরী বাড়ির ভাড়াটিয়া মমতাজ চৌধুরীর ছেলে।
একই ঘটনায় মেহেদী হাসান আশিক রাব্বানী বাবু (২৩) নামে আরও এক আসামি পলাতক আছে। মেহেদী আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনির ঈদগাঁও মাঠের পূর্বপাশে ই/পি লেনের আব্দুল বাতেন মেম্বারের ভবনের পঞ্চম তলার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জাহেদের ছেলে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার পর রাকিবুল নগরীর মাস্টার লেইনে এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করে ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আকবর শাহ থানা পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আমরা তাকে গ্রেফতার করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আমাদের ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করে।’
এদিকে রাকিবুল চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার জাহানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন।
মামলার এজাহারে বাদির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার শিকার ১৮ বছর বয়সী মেয়েটির বাসা আকবর শাহ থানা এলাকায়। তিনি নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। রাকিবুলের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে পরিবারের চাপে মাসখানেক আগে মেয়েটি সেই সম্পর্ক ভেঙে দেয়। গত শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে বই কেনার কথা বলে মেয়েটি বাসা থেকে বের হয়। রাতে চরম অসুস্থ ও বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরে কাঁদতে শুরু করে।
মেয়েটি অভিভাবকদের জানায়, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার কথা বলে তাকে ফোন করেছিল রাকিবুল। আহত অবস্থায় সে মেহেদীর বাসায় আছে জানিয়ে তাকে সেখানে যাবার অনুরোধ করে। দুর্ঘটনার কথা শুনে মেয়েটি ওই বাসায় ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে দেখতে পায়, রাকিবুলের দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। ফাঁকা বাসায় রাকিবুল ও মেহেদী মিলে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বাসায় ঢোকার পর তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে মেয়েটি দু’জনের পায়ে ধরে কান্না শুরু করে। কিন্তু কান্নার চিৎকার যাতে কেউ শুনতে না পায় সেজন্য তারা উচ্চশব্দের সাউন্ডবক্সে গান ছেড়ে দেয়।
ওসি জহির সারাবাংলাকে জানান, এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় রাকিবুল ও মেহেদীকে আসামি করা হয়। রাকিবুলকে গ্রেফতারের পর তারা এখন মেহেদীর সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছেন। বখাটে রাকিবুল পাহাড়তলীর ইউসেপ স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। কিছুদিন সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেছিল। তবে এখন পুরোপুরি বেকার। ২০১৭ সালের নভেম্বরে নগরীর চকবাজার থানা পুলিশ রাকিবুলকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাকিবুল চট্টগ্রাম নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজ ও জিইসি মোড়কেন্দ্রিক কথিত যুবলীগ নেতা মো. আলী সাহেদের কর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়। চকবাজার থানায় দায়ের অস্ত্র মামলায় রাকিবুলের সঙ্গে আলী সাহেদও আসামি ছিলেন। রাকিবুলের বন্ধু মেহেদীও নিজেকে যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়। মূলত রাজনৈতিক পরিচয়েই তারা বেপরোয়া কর্মকাণ্ড করেন।