Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইসির অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া ৪২ নাগরিকের চিঠিতে যা আছে


১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৫৯

ঢাকা: কে এম নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণকারী উল্লেখ করে গত ১৪ ডিসেম্বর দেশের বিশিষ্ট ৪২ জন নাগরিক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্ত এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই সংবিধানের ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে ইসিকে অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে নাগরিকসমাজ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে ইসির অপকর্ম বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি গত ১৪ ডিসেম্বর বঙ্গভবণে রাষ্ট্রপতির দফতরে বিশিষ্ট নাগরিকদের দাবি সংবলিত চিঠিঠি পৌঁছে দেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিতে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনি আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আপনি অবগত আছেন যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের জন্য সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল (কাউন্সিল) গঠনের বিধান রয়েছে। সংবিধানের ৯৬(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যে ক্ষেত্রে কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্যে রাষ্ট্রপতির এইরূপ বুঝিবার কারণ থাকে যে কোনো বিচারক-…. (খ) গুরুতর অসদাচারণের জন্য দোষী হইতে পারেন, সেইক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করিতে ও উহার তদন্ত ফল জ্ঞাপন করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন|”

চিঠিতে আরও বলা হয়, আপনি আরও অবগত আছেন যে, আমাদের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে। ১১৮(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে: তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রীম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোনো নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না।

এতে বলা হয়, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যগণ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে গুরুতর অসদাচারণে লিপ্ত হয়েছেন। কমিশনের সদস্যগণ একদিকে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যা অভিশংসনযো্গ্য অপরাধ। একইভাবে তাঁরা বিভিন্নভাবে আইন ও বিধিবিধানের লঙ্ঘন করে গুরতর অসদাচরণ করে চলেছেন বলে আমরা মনে করি। আমরা আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মসহ কমিশনের গুরুতর অসদাচরণের অন্য কয়েকটি ক্ষেত্র আপনার সদয় অবগতির জন্য চিহ্নিত করছি, যার আরও বিস্তারিত বিবরণ এই আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত হলো।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া চিঠিতে পয়েন্ট আকারে ইসির অনিয়মের বিষয় তুলে ধরা হয়। তার মধ্যে রয়েছে

আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণ

১ ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বক্ততা দেওয়ার নামে ২ কোটি টাকার মতো আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম।

২. নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার অসদাচরণ ও অনিয়ম।

৩ নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনজন কমিশনারের তিনটি গাড়ি ব্যবহারজনিত আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম।

 অন্যান্য গুরুতর অসদাচারণ ও অনিয়ম

১ ইভিএম ক্রয় ও ব্যবহারে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম,

২ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম,

৩ ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুতে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম।

৪ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অসদাচরণ ও অনিয়ম,

৫ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম,

৬ সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আমাদের উত্থাপিত এবং গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত উপরিল্লিখিত তিনটি সুনির্দিষ্ট আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ সংশিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত করার লক্ষ্যে আপনাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। একইসঙ্গে উপরিল্লিখিত গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগগুলো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অনান্য সংস্থা কর্তৃক প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এবং প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্তের জন্য সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে পাঠানোর বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন ১. অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ২. এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ৩. ড. আকবর আলী খান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ৪. সুলতানা কামাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ৫. রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ৬. ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকারকর্মী ৭. আলী ইমাম মজুমদার সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ৮. অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ৯. খুশী কবির, মানবাধিকারকর্মী ১০. অধ্যাপক পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি ১১. ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক সুজন ১২. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি। ১৩. অধ্যাপক আহমেদ কামাল ১৪. অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ১৫. অ্যাডভোকেট জেড. আই খান পান্না, ১৬. ড. শাহদীন মালিক ১৭. ড. শহিদুল আলম আলোকচিত্রশিল্পী ১৮. অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ১৯. ড. আহসান মনসুর অর্থনীতিবিদ ২০. আবদুল লতিফ মণ্ডল সাবেক সচিব ২১. স্থপতি মোবাশ্বের হাসান ২২. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট ২৩. অধ্যাপক সি. আর আবরার শিক্ষাবিদ ২৪. ব্যারিস্টার সারা হোসেন ২৫. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ২৬. অধ্যাপক আসিফ নজরুল ২৭. অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ ২৮. লুবনা মরিয়ম, আর্টিস্টিক ডিরেক্টর, সাধনা ২৯. অধ্যাপক আকমল হোসেন ৩০. অধ্যাপক আদনান, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ৩১. শারমিন মুরশিদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্রতী ৩২.অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন ৩৩. অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম ৩৪. সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ ৩৫. সাংবাদিক আবু সাঈদ খান ৩৬. সাংবাদিক গোলাম মোর্তুজা ৩৭. অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ৩৮. অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা ৩৯. অ্যাডভোকেট জোতির্ময় বড়ুয়া্ ৪০ অধ্যাপক নায়লা জামান খান পরিচালক, ক্লিনিকাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, ৪১. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ ৪২. নূর খান লিটন, মানবাধিকারকর্মী।

৪২ নাগরিক ইসি টপ নিউজ নির্বাচন কমিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর