Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙে যুবলীগ নেতা


১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:১৫

কুষ্টিয়া: কয়া মহাবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বিপদে ফেলতেই বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছিল ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আনিসুর রহমান আনিস ও তার দুই কর্মী। শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে আসামিদের হাজির করে একথা জানিয়েছে পুলিশ।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত জানান, স্থানীয় কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জেরে বর্তমান কর্তৃপক্ষকে বিপদে ফেলতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়। কলেজের নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমানের দেওয়া তথ্যে তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো- কয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আনিসুর রহমান আনিস (৩৫) এবং যুবলীগের দুই কর্মী সবুজ হোসেন (২০) ও হৃদয় আহমেদ (২০)।

কয়া মহাবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চুন্নুর সাথে যুবলীগের সভাপতি আনিচুর রহমানের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মৌলবাদী গোষ্ঠি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে গত ৫ ডিসেম্বর। এরপর সারাদেশে শুরু হয় মৌলবাদবিরোধী আন্দোলন। দেশের সব ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য হাইকোর্টও আদেশ দেন। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও কয়া গ্রামে বাঘা যতীনের জন্মস্থান কয়া মহাবিদ্যালয় ভাস্কর্যটি নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ। এই সুযোগে ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি নিজামুল হক চুন্নুকে বেকায়দায় ফেলতে বৃহস্পতিবার রাতে দু’টি মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে।

বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর, যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৩

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর শুক্রবার রাতে কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথমে কয়া মহাবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চুন্নু, অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ এবং নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমানকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। পুলিশ বুঝতে পারে এটি কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা নয়।ব্যবস্থাপনা পরিষদকে বিপদে ফেলতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নৈশপ্রহরী আসামিদের চিনতে পারলেও প্রথমে নীরব ছিলেন, পরবর্তীতে তিনি সত্য ঘটনা তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

সব ভাস্কর্য পাহারা দেওয়ার জন্য সিসি ক্যামেরা বসানো হয় কুষ্টিয়ায়, কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য পাহারায় কেন সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা বসানোর টাকা ফান্ডে ছিলো না। টাকা সংগ্রহ করে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।’ আর এই ঘটনারই সুযোগ নিয়েছিলেন যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান।

এদিকে, ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, বাঘা যতীনের জন্মভিটা তার মামার বাড়ির আঙিনায় নির্মাণ হয় কয়া মহাবিদ্যালয়। ওই স্কুল মাঠেই ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিপ্লবী বাঘা যতীনের মৃত্যু শতবার্ষিকী পালন ও উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে ভারতের ত্রিপুরার গভর্নর তথাগত রায় চৌধুরী সেখানে একটি স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন। ১৯১৫ সালে ভারতের উড়িষ্যার বালেশ্বরে পুলিশের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে বাঘা যতীন আহত হন। ১০ সেপ্টেম্বর বালেশ্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃতুবরণ করেন। ভারতে বাঘা যতীনের নামে অনেক কিছু থাকলেও কুষ্টিয়ায় তার জন্মভূমি কয়া গ্রামে মামার বাড়ির সামনে এই ভাস্কর্যই তার একমাত্র স্মৃতি।

টপ নিউজ বাঘা যতীন ভাস্কর্য ভাঙচুর যুবলীগ সভাপতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর