নেই নাগরিক সুবিধা: ২ নদী পার হলে শহর তবুও সিটির বাসিন্দা
২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:৪৪
বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভূক্ত একটি গ্রাম চর জাগুয়া। নগর থেকে সরাসরি গ্রামটিতে যেতে দুটি নদী (সুগন্ধা ও মরা কুমারখালী) পাড়ি দিতে হয়। চারদিকে ঝোঁপজঙ্গল। বছরজুড়ে থাকে চোর-ডাকাতের উৎপাত। নেই খাবার পানির ব্যবস্থা কিংবা স্যানিটেশন। একটিমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তা নিয়েও নানা অভিযোগ বাসিন্দাদের। গ্রামটিতে নাগরিক সুবিধার ছিটেফোঁটাও নেই। সিটি করপোরেশনের মধ্যে পড়ে শুধু খাজনাটাই বেড়েছে!
চর জাগুয়ার সবচেয়ে প্রবীণ বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, আগে খাজনা দিতাম কাঠায় ৮ টাকা। এখন করপোরেশনে গিয়া খাজনা দিই কাঠায় ৫০ টাকা। কীভাবে আমরা সিটির মধ্যে গেলাম, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। মাঝখানে এত বড় নদী রেখে তারা আমাদের কী করে সিটিতে নিল? আমাদের এলাকাকে বর্ধিত এলাকা বলা হয়। এ এলাকা বাড়ানোর সময় তারা কেন সরেজমিনে দেখে নিল না।
দেখা গেছে, ২০০২ সালের ২৫ জুলাই পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত হওয়ার আগে পৌর এলাকার আয়তন ছিল মাত্র ২৫ বর্গকিলোমিটার। নগরে রূপান্তরের সময় এ আয়তন বাড়িয়ে ৪৫ বর্গকিলোমিটার করেন তৎকালীন কর্তাব্যক্তিরা। সরেজমিন না দেখে ম্যাপের কাটাকুটিতে বেড়ে যাওয়া এ আয়তনে ঢুকে যায় বহু গ্রাম। বর্ধিত এলাকা হিসেবে পরিচিত সেসব এলাকার মধ্যে চর জাগুয়াকে বলা হয় সবচেয়ে অভাগা।
দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছরেও সেই দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি মেলেনি গ্রামের মানুষের। ভোট এলেই শুধু এখানে আসেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। শোনান উন্নয়নের আশ্বাস বাণী। ভোট ফুরোলে ফুরিয়ে যায় তাদের যাতায়াত।
স্থানীয় বাসিন্দা শিউলী বেগম অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দা আমরা। কিন্তু সিটির কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না। আমরা অনেক কষ্টে আছি। কোনো সাহায্য কেউ দেয় না। সবাই বলে শুধু সিটির বাসিন্দা। কিন্তু কোনো উপকার নাই তাতে। কাউন্সিলর, মহিলা কাউন্সিলর কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয় না।
গ্রামটিতে একটি মাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১২৩নং চর জাগুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি করোনার কারণে বন্ধ। বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য সরকারের দেওয়া টিউবওয়েলটিও বেহাত হয়ে গেছে। সেটির হ্যান্ডেলসহ মাথা খুলে মোটর বসিয়ে পানি উত্তোলন করে ব্যবহার করছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির এক আত্মীয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম বলেন, মোটর যাতে চুরি না হয়, সে কারণে আরেকজনের ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোনাব্বর খান বলেন, টিউবওয়েল সরিয়ে ফেললেও স্কুলের বাচ্চারা ঠিকমতোই পানি পাচ্ছে। যাদের ঘরে টিউবওয়েল থেকে পাইপ নেওয়া হয়েছে তারা স্কুলে পানি সরবরাহ করে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে উন্নয়ন বরাদ্দ। প্রয়োজনীয় অর্থ পেলেই চর জাগুয়ার উন্নয়ন কাজে হাত দেওয়া হবে।
চর জাগুয়ায় এখন তেমন কোনো সমস্যা নেই দাবি করে কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির বলেন, ওখানে উন্নয়নের বেশি কিছু বাকি নেই। একটি সেতু আর একটি রাস্তা সংস্কার করতে হবে। টেন্ডারের কাজ শেষ। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।