ব্রিজে উঠতে কাঠের গুঁড়ি, চৌহালীতে দুর্ভোগে ৭ গ্রামের মানুষ
২২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:১৭
সিরাজগঞ্জ: সাত গ্রামের মানুষের যাতায়াতের পথে বিনানুই খাল। নৌকা ছাড়া ছোট্ট খালটি পারাপারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। হাজার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত খালের ওপর নির্মিত হয়েছে একটি ব্রিজ। ১০ মাস আগে সেই কংক্রিটের ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনো তৈরি হয়নি সংযোগ সড়ক। ফলে ব্রিজ তৈরি হয়েও তা আসছে না কোনো কাজে। সাত গ্রামের হাজার মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগেরও অবসান হয়নি।
ব্রিজটি নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রিজ নির্মাণের পর দুই পাশের মাটি ভরাট করা হয়েছিল। তবে বন্যার সময় পানির তোড়ে তা মাটি ভেসে গেছে। আর এলাকাবাসী বলছেন, মাটি ভরাটের কাজটি করা হয়েছিল নামেমাত্র। ফলে সেই মাটির সংযোগ সড়ক স্থায়ী হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ঠিকাদার বলছেন, শিগগিরই মাটি ভরাটের কাজ শুরু হবে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানুই গ্রামের বিনানুই নতুন বাজার-গয়হাটা মরিচপাড়া সড়কের বিনানুই খালের ওপরে নির্মিত হয়েছে কংক্রিটের ব্রিজটি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ দেওয়া অর্থে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই ব্রিজ তৈরি ঞয়। ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের ব্রিজটির নির্মাণ খরচ ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৪ টাকা। এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, তাদের নিত্য যাতায়াতের পথে ব্রিজটি নিয়ে আশার সঞ্চার হলেও শেষ পর্যন্ত ব্রিজটি যেন বাড়তি দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। কারণ ব্রিজের দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। ব্রিজে ওঠা-নামার পথে তারা বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছেন কাঠের গুঁড়ি। তাতে করে বিনানুই, চর বিনানুই, চর সলিমাবাদ, চর নাকালিয়া, নয়াপাড়া, গয়হাটা মরিচপাড়া ও শান্তিনগর— এই সাত গ্রামের অন্তত পাঁচ হাজার মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে ব্রিজটি।
সাত গ্রামের বেশ কয়েকজন অধিবাসীর সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তাদের মধ্যে রয়েছেন— বিনানুই গ্রামের আব্দুল মজিদ ও মনু মিয়া, চর বিনানুই গ্রামের আব্দুল আউয়াল মোল্লা, চর সলিমাবাদ গ্রামের মুকুট মোল্লা ও রফিক খাঁ, চর নাকালিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী, শান্তিনগর গ্রামের মনসুর আলী।
গ্রামবাসী বলছেন, ১০ মাস ধরে ব্রিজটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু দুই পাশের সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট করা হয়নি। ফলে যাতায়াতে চরম কষ্ট পোহাচ্ছেন তারা। কিশোর-তরুণরা লাফিয়ে কাঠের গুঁড়িতে উঠে তারপর হাতের ওপর ভর দিয়ে ব্রিজে উঠছেন। কিন্তু বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য এই ব্রিজে ওঠা-নামার বিষয়টি ভীষণ ঝুঁকির। ফলে তাদের এ পথে যাতায়াত প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে।
তারা বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের পর দায়সারাভাবে সামান্য মাটি ফেলা হয়। বর্ষায় তা ভেঙে যায়। এরপর থেকেই আমাদের যাতায়াতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ব্রিজের দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় এ ব্রিজ দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহনও চলাচল করে না। ফলে এলাকাবাসী ধান-চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ভারি বোঝা বহন করতে পারছেন না এই পথে। ফলে ব্রিজটি এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। তাই অবিলম্বে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিজটির সাব-ঠিকাদার রমজান আলী বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের পর দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই ওখানে মাটি ভরাট করা হবে।
এ বিষয়ে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাহ্হার সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, ব্রিজটির দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় ভেঙে গেছে। অচিরেই ওখানে মাটি ভরাটের কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মজনু মিয়াও একই কথা বলেন সারাবাংলাকে। তিনি বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের পর মাটি ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যার পানির তীব্র চাপে তা ভেঙে গেছে। বিষয়টি আমার মাথায় আছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করা হবে। তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।