Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হল না খুলে পরীক্ষার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা, অনড় ঢাবি প্রশাসন


২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:২৩

ঢাবি: শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা না করেই স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা আয়োজনের চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। তবে হল খুলে না দিয়েই পরীক্ষা নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। ঢাবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। হল খুলে না দিলে শিক্ষার্থীদের বাইরে অবস্থান থেকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোও দাবি তুলেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিয়ে তবেই পরীক্ষা নেওয়া হোক।

বিজ্ঞাপন

তবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ অনড়। পরীক্ষা নিতে পারলেও হল খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের ‘জীবনের ঝুঁকি’তে ফেলতে নারাজ তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, জোরজবরদস্তি করে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে ফেলে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।

গত ১০ ডিসেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলে সেশন জটের ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে স্নাতক শেষবর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভাগগুলোকে পরীক্ষা শুরু করতে বলা হয়। তবে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলগুলো খোলা হবে না— এমন সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ছিল, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবে বিভিন্ন বিভাগ। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে বেশ কয়েকটি বিভাগ।

এরই মধ্যে কলা অনুষদের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেছে। বিভাগ দু’টির শিক্ষার্থীরা সারাবাংলাকে জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা না করেই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়েছে। সাধারণ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার আগে ন্যূনতম একসপ্তাহের প্রিপারেটরি লিভ বা প্রস্তুতিকালীন ছুটি এবং একটি কোর্সের পরীক্ষার পর নির্দিষ্ট সময় বিরতি রেখে অন্য কোর্সের পরীক্ষা নেওয়া হলেও বিভাগ দু’টি সেই পথে যাচ্ছে না।

ম্যানেজমেন্ট বিভাগ তাদের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় টার্মের পরীক্ষা আগামী জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ থেকে ১১ তারিখের মধ্যে বিরতি ছাড়াই টানা গ্রহণের বিষয়ে নোটিশ দিয়েছে। এছাড়া ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে স্নাতক শেষ বর্ষের প্রথম টার্ম এবং সেটি শেষ না হতেই ১৯ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে দ্বিতীয় টার্মের পরীক্ষা নেবে বিভাগটি।

বিজ্ঞাপন

তবে বিভাগটির স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলছেন, হল না খুলে পরীক্ষা গ্রহণ ও এই ধরনের টানা পরীক্ষার সিদ্ধান্তে মোটেও সন্তুষ্ট নন তারা। তারা বলছেন, প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। কোনো আলোচনা না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা। পরীক্ষার সময়সীমা ও হল খুলে দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেবেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগটির স্নাতক শেষবর্ষের এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অসুবিধা ও অক্ষমতার কথা ন্যূনতম বিবেচনা  না করেই প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এভাবে পরীক্ষায় বসতে পারব না। আমাদের থাকার জায়গা কে দেবে? আর টানা ১০টি কোর্সের পরীক্ষা নেওয়ার কথা চিন্তা কিভাবে করেন তারা! আমরা কি রোবট?

এদিকে, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ চতুর্থ বর্ষ সপ্তম সেমিস্টার পরীক্ষা নিতে শুরু করবে জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে। এই সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষে ২৪ জানুয়ারি থেকে অষ্টম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা নেবে বিভাগটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগটির এক শিক্ষার্থী বলেন, একে তো আমাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেননি, তার ওপর টানা পরীক্ষা। আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত কিভাবে নেন তারা!

পরীক্ষা গ্রহণ-সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারপারসন ড. ফাজরীন হুদা ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. ফারুক আহমদের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে আলোচনাসাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণ করবে। এতে কোনো জবরদস্তির সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের কল্যাণই প্রথম কাজ। শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।

কয়েকটি বিভাগ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ না করেই পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে জানালে ঢাবি উপাচার্য বলেন, আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন কিংবা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। বিভাগগুলো ডিসেন্ট্রালাইজড। পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই ভালো বুঝবেন। তারা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আবাসিক শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা বিবেচনায় না রেখে হল না খুলেই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পরীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আগেই বলেছি— যদি সম্ভব হয়, তবে পরীক্ষা গ্রহণ করবে। না হলে করবে না।’

ছাত্রসংগঠনগুলো কী বলছে

হল না খুলেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিন দিন পর গত ১৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। হলে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া একপাক্ষিক, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিপ্রতীপ, বিদ্যমান বাস্তবতায় অনুপযুক্ত সমাধান এবং কোনো অবস্থাতেই অভিভাবকসুলভ নয় বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ আরও একমাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন। গত ১৭ ডিসেম্বর উপাচার্য বরাবর মোট ৯টি প্রস্তাবসহ স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি।

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু রায়হান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এরপরও দেখলাম, এই অবস্থাতেও কয়েকটি বিভাগ পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনকি তারিখও ঘোষণা করেছে।  প্রশাসন মূলত দায়সারা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা ন্যূনতম চিন্তা করেনি।’

এর আগে ১০ ডিসেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলে নেওয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে গুগল ফর্মের মাধ্যমে একটি অনলাইন জরিপের আয়োজন করে ছাত্র ফেডারেশন। ‘পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত’ শিরোনামের জরিপটি ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়। এতে এক হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থী তাদের মতামত প্রকাশ করে।

‘আপনি কি হল না খুলে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে একমত?’— এই প্রশ্নের উত্তরে ৯৩০ (৮৯.৭%) জন না ভোট ও ১০৬ (১০.২%) জন হ্যাঁ ভোট দিয়েছেন। ‘আপনি কি অনলাইনে ছাত্রদের মিড/ইনকোর্স/টিউটোরিয়াল নেয়ার ব্যাপারে একমত?’— এ প্রশ্নের উত্তরে ২৯২ (২৮.২%) জন ছাত্র হ্যাঁ ভোট ও ৭৪৫ (৭১.৮%) জন না ভোট দিয়েছেন। ‘আপনি কি চান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ নিক?’— এ প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ ভোট দিয়েছেন ৬৮২ (৬৫.৮%) জন, না ভোট দিয়েছেন ৩৫৪ (৩৪.২%) জন। শিক্ষার্থীদের লিখিত মতামত বক্সে ৬৬৭ জন তাদের নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এই দাবিতে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রাকিব ও সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমানের সই করা একটি স্মারকলিপি উপাচার্য বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র সংগঠন ঢা‌বি পরীক্ষা হল

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর