দুদকের জালে অর্ধশতাধিক প্রভাবশালী, চলছে অনুসন্ধান
২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:০৪
ঢাকা: দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্ধ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় অনুসন্ধান চলছে জোরেশোরে। দুদক বলছে, দুর্নীতির সত্যতা মিলে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, রেল, বিদ্যুৎ, সিভিল অ্যাভিয়েশন, ব্যাংক, পাঁচ তারকা হোটেল, ডাক বিভাগ এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাবেক-বর্তমান প্রভাবশালী কর্মকর্তারা রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থপাচার, অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানের যারা রয়েছেন তারা হলেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড-এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণচন্দ্র সাহা, ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য ফাতেমাতুজ জোহরা, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল বেপজা’র সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান খান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক শিকদার, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম, সিভিল অ্যাভিয়েশন অথিরিটির সাবেক চেয়ারম্যান নাঈম হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আ শ ম ইমদাদুদ দস্তগীর, ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের চেয়ারম্যান মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক আরিফ মোতাহার, হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ ভুইয়া। এ ছাড়া আরও রয়েছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান।
সদ্য অবসরে যাওয়া রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান ছাড়াও রেলের সাবেক-বর্তমান বিশ ঊর্ধতন কর্মকর্তাসহ সব মিলে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান জালে। অপরদিকে ডাকের মহাপরিচালক সুধাংশ শেখরের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক।
যেমন রেলের শামছুজ্জামান অনিয়মের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ হুন্ডি হিসেবে লন্ডনে পাচার করেন বলে অভিযোগ করা হয়। মহাপরিচালকের ছেলে সাদমান জামানের ব্যাংক হিসাবে এসব অর্থ জমা হয়েছে। ব্যাংক ও শাখার নামও উল্লেখ রয়েছে দুদকের নথিতে। সেটি হলো লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংকের মুরগেট শাখা। শাখার ফোন নাম্বার ০৩৪৫৭৩৪৫৩৪৫ দেওয়া হয়েছে।
এ সব অভিযোগে দেখা যায়, তিনি অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) থাকাকালে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ১০০ মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ ক্রয় করেন। এ ছাড়া ১১০টি ট্রাকশন মোটর মেরামতে অনিয়মের মাধ্যতে ২৪ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন।
শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের বিষয়েও দুদকে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এতে দেখা যায়, রাজধানীর শান্তিবাগে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। তার সাবেক স্ত্রীকেও একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে দেন, যা অভিযোগে ওঠে এসেছে। পূর্বাচলে সাড়ে সাত কাঠার প্লট, মিরপুরে সাড়ে তিন কাঠা জায়গা ও যশোরের ঝিকরগাছায় ৬০ বিঘা জমিসহ দুই তলা বাড়ি রয়েছে।
অপরদিকে ডাক অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) সুধাংশু শেখর ভদ্রের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলায় বিদেশ যাত্রায় সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠিও দিয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ডাক বিভাগের প্রায় ৫৪১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের একটি প্রকল্পের ১৬০ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া শতশত কোটি টাকার দুর্নীতি এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সে জন্য দুদক এরইমধ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। তবে অনুসন্ধান এখনও চলমান রয়েছে।
শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বেসরকারি যেসব প্রভাশালী ব্যক্তির দুর্নীতির অনুসন্ধান পড়ে ছিল সেগুলো আবার সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুর্নীতি কখনো ছোট বড় নই। দুর্নীতি তো দুর্নীতিই সেটি যেমনই হোক। ছোট ছোট দুর্নীতি থেকেই বড় বড় দুর্নীতির জন্ম দেয়। দুদক আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুদকের দুর্নীতির বিষয়ে আর বিশদ অনুসন্ধান প্রয়োজন। একইসঙ্গে দুদকের জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে সেগুলোর সমাধান প্রয়োজন। কেননা যে তুলনায় দুর্নীতির অভিযোগ আসে সেই তুলনায় দুদক অনুসন্ধান করতে পারে না। যদি সকল দুর্নীতি দুদক অনুসন্ধান করতে পারতো তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসত। তবে আমরা আশাবাদী দুর্নীতিবাজদের শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব সেটি একদিন হবেই।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অনেক দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছি। যারাই অপরাধ করুক না কেন আমাদের অনুসন্ধানে যদি কোনোভাবে প্রমাণিত হয়। তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব এবং প্রয়োজনীয় যত ব্যবস্থা আছে তা নেব। কোনো দুর্নীতিবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না।’