দুর্গম পাহাড়ে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে তারুণ্যের ‘মৈত্রী পরিষদ’
২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:০৬
রাঙামাটি: জেলা সদর থেকে পানিপথে ৬০ কিলোমিটার দূরের উপজেলা বরকল। পানিবেষ্টিত রাঙামাটির বরকল উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। নৌপথ এই উপজেলার মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। সীমান্তবর্তী এই উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরতদের মাঝে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে একদল তরুণ-তরুণী। ‘মৈত্রী পরিষদ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে তারা তীব্র ঠাণ্ডায় কাবু শীর্তাত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে উপহারস্বরূপ কম্বল বিতরণের মধ্য দিয়ে।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বরকল উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড দেওয়ানচর এলাকায় বনভান্তের স্মৃতি মন্দির প্রাঙ্গণে আশপাশের অর্থশতাধিক পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন তারা।
এসময় তাদের এই কর্মসূচিতে সহায়তা করেন দেওয়ানচর বনভান্তের স্মৃতি মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পূর্ণমঙ্গল চাকমা, স্থানীয় ইউপি সদস্য শান্তিপ্রিয় চাকমা, পাড়া কার্বারি কনক বরণ চাকমা। সঙ্গে ছিলেন মৈত্রী পরিষদের সভাপতি সুজন বড়ুয়া, সদস্য সুব্রত বড়ুয়া, প্রণব বড়ুয়া, সুস্মিতা বড়ুয়া, শান্তনু বড়ুয়াসহ আরও অনেকেই।
পাহাড়ি জনপদের দুর্গম পাহাড়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এমন কর্মসূচি নেওয়ায় উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রাও। স্থানীয় ইউপি সদস্য শান্তিপ্রিয় চাকমা ও পাড়াকার্বারি (গ্রাম প্রধান) কনক বরণ চাকমা জানান, ‘সারাদেশের মতো পাহাড়েও জেঁকে বসেছে শীত। পাহাড়ি এলাকার গ্রামের মানুষ অত্যন্ত সহজ-সরল ও গরীব। তাদের শহুরে এলাকার বিত্তশালীদের মত এতটা ভালো অবস্থা নেই যে যথেষ্ট প্রয়োজনীয় গরম কাপড় কেনার। সমতলের এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গরীবের শীত নিভারণে এগিয়ে আসলেও পাহাড়ে তেমন কেউ আসে না। মৈত্রী পরিষদ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি যে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সেটি অত্র এলাকার মানুষ মনে রাখবে।’
মৈত্রী পরিষদের সভাপতি সুজন বড়ুয়া জানান, তাদের সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যই হলো দুঃস্থ-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। শহরের আশপাশে গ্রামে বিভিন্ন সময়ে নানান সহায়তা পৌঁছালেও দূরের এই দুর্গম এলাকায় সেসব পৌঁছায় না। তাই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক সুপ্রিয় বড়ুয়া রাজীব বলেন, ‘আমাদের অবস্থান সবসময়ই মানুষের পাশে। আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে প্রাণান্ত চেষ্টা করি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন পৃথিবীটা মানুষের হবে জাতি, ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে ওঠে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে নানাভাবে সেই স্বপ্নই আমরা দেখি।’
এদিন সকাল নয়টায় রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমি ঘাট হতে রওনা হওয়া ইঞ্জিনচালিত বোট ওই এলাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। কর্মসূচি শেষে ফের আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময়ের নৌপথ পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে আসতে আসতে পড়ন্ত বিকেল কেটে তখন প্রায় সন্ধ্যা।