‘দেশে প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতি নেই’
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:০০
ঢাকা: ‘বাংলাদেশ ২০২০ সালের অপ্রত্যাশিত সময়েও অর্থনীতিতে ভালো করেছে। কিন্তু এই ভালো করার মধ্যে অনেক ফাঁকফোকর বা প্রকৃত টেকসই উন্নয়নের ঘাটতি রয়েছে। এই সময়ে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, কিন্তু বিনিয়োগ হয়নি। আবার কর্মসংস্থান হয়নি, কিন্তু আয় ও বৈষম্য বেড়েছে। এর পেছনে কাজ করেছে প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতির সংকট।’
চলতি ২০২০ সাল মূল্যায়ন করতে গিয়ে সারাবাংলা ডটনেটের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সমাজে বহুত্ববাদের চর্চা ও বহুমতের জায়গা থাকা জরুরি উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘একটি সমাজে তর্ক-বিতর্কের জায়গা এবং সুস্থ গণতান্ত্রিক জায়গা থাকাটা জরুরি। আপনি-আমি প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার অর্থনীতি চাইব, কিন্তু প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতি ছাড়া এটা কি সম্ভব? পৃথিবীতে কখনো প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতি ছাড়া প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস বলে যে কোনো একটি ভবন থেকে একসময়ে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হতো। তাতে অর্থনীতির প্রতিযোগিতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার ফলে অর্থনীতি বিকশিত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা তখন যৌক্তিভাবে রাষ্ট্রীয় প্রকল্প দাঁড় করাতে পারিনি। এই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।’
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা এখন প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতিতে নেই। তার বড় লক্ষণ হচ্ছে করোনা সময়ের পরিস্থিতি। এই সময়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা বিতরণের জন্য তার রাজনৈতিক কর্মী বাহিনীকে বেছে নেননি, তিনি প্রশাসনের ওপর নির্ভর করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক কর্মী বাহিনীকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরেকটা লক্ষণ হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ। এই সময়ে মন্ত্রিপরিষদ একত্রে বসে করোনা প্রতিরোধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা সমন্বিতভাবে কাজ করেছে বা করোনা উত্তরণে একত্রিতভাবে জাতীয় পরিকল্পনা করেছে বা পরামর্শগুলো মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়েছে— এমন কিন্তু দেখা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা লক্ষণ হচ্ছে জাতীয় সংসদ। সংসদের ভেতরেও বিস্তারিতভাবে করোনার উপলব্ধিগুলো বা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং তার ভিত্তিতে আলোচনা— এমন কিন্তু দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, এই সময়ে স্বাস্থ্য নিয়ে এত বিপর্যয় হলো, কিন্তু সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে কিন্তু কোনো বৈঠক বা কাজ করতে দেখা যায়নি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি করোনার আগে দুই বার বৈঠক করেছে। প্রশাসনের ওপর যেসব সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নজরদারি করার কথা ছিল, তা কিন্তু তারা করেনি।’
আমি এখন দেশে বিরাজনীতিকরণ হওয়ার প্রক্রিয়া দেখছি— এমন মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কারণ হচ্ছে যে রাজনীতিকে বাইরে রেখে, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বাইরে রেখে, নিজের দল, সংসদ, মন্ত্রিপরিষদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, স্থানীয় সরকার— এদের কাউকেই ব্যবহার না করা হচ্ছে রাজনীতিহীনতা। প্রশাসন, পুলিশ, সামরিক বাহিনী— এদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এদের ব্যবহার করা দোষনীয় নয়। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণের পরিপূরকতার জন্য রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহণ জরুরি। কেননা জনগণের সঙ্গে রাজনীতিবিদরাই থাকেন। এই সমস্যাটা বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে রাজনীতিতে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি। এ কারণে এখন ধর্মীয় আন্দোলন দেখা যায়, রাজনৈতিক আন্দোলন দেখা যায় না। এই কারণে সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ধারার রাজনীতি, একাত্তরের চেতনার রাজনীতি এখন অনুপস্থিত।’
ফাইল ছবি
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিরাজনীতিকরণ রাজনীতি