বই উৎসবের প্রথম দিনে সাড়া কম
১ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:৫০
ঢাকা: এবার পুরনো নিয়মে বই উৎসব না হলেও বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছে সরকারের শিক্ষা বিষয়ক দুই মন্ত্রণালয়। গত বছরগুলোর মতো বই নিতে এবার শিক্ষার্থীদের এতো ভিড় হয়নি। তবে রাজধানীর অনেক বিদ্যালয়ে সকাল থেকেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন বই নিতে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় সব বিদ্যালয়েই করোনাবিধি মেনে এবার বই বিতরণ হয়েছে। তবে তিন দিন সময় থাকায় কয়েকটি বিদ্যালয় আজ বই বিতরণ করেনি। এর বদলে আগামীকাল শনিবার থেকে এসব বিদ্যালয়ে শুরু হবে বই বিতরণ। শিক্ষার্থীরা বই নিতে পারবে পরেরদিনও।
আজিমপুরের অগ্রণী স্কুলে আজ বই বিতরণ শুরু হয় সকাল নটায়। তবে প্রথম দিনে বিদ্যালয়টিতে বই নিতে আসা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। এর কারণ হিসেবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, নববর্ষের রাতে পুরো এলাকায় গান বাজনা হওয়ায় আজকে সকালে অনেকে ঘুম থেকে উঠেছেন দেরীতে। এজন্য বই নিতে আসা শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল কম।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান রেজাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরগুলোতে জানুয়ারির এক তারিখ দিনটি ছিল অন্যরকম। এবছর আবার তেমনটা হচ্ছে না। কারণ মহামারির ঝুঁকি। আমরা যেহেতু আরও দুইদিন বই বিতরণ করবো সেক্ষেত্রে শনিবার শিক্ষার্থী সমাগম বড়বে।’
একই এলাকার আজিমপুর গার্লস, উদয়ন এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চিত্রটা অগ্রণী স্কুলের তুলনায় ভিন্ন কিছু ছিল না। তবে লালবাগসহ পুরনো ঢাকার অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত এলাকাতে বই নিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। লালবাগ উচ্চ বিদ্যালয়, ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল, নব কুমার ইনস্টিটিউটে প্রথম দিনেই তালিকায় থাকা অধিকাংশ বই বিতরণ হয়ে গেছে।
নবকুমার ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মোকাব্বির বলেন, ‘বই নিতে শিক্ষার্থীরা এসেছিলো, অভিভাবকরাও এসেছিলেন। আমরা আরও দুইদিন বই বিতরণ করবো। প্রথম দিনে যে পরিমাণ বই বিতরণ করার কথা ছিল তার অধিকাংশই বিতরণ হয়ে গেছে।’
‘করোনাবিধি’ মেনেই নতুন বই নিয়ে উচ্ছ্বাস
শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের প্রায় সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বই বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করোনার কারণে এবার একেকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিন দিন করে বই দেওয়া হবে। এভাবে মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে নবম পর্যন্ত চারটি শ্রেণিতে ১২ দিন ধরে বই দেয়া হবে। যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম সেখানে একদিনেই বই দেওয়া হচ্ছে।
একেকটি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা শ্রেণি নম্বর অনুযায়ী তিন দিনে ভাগে ভাগে গিয়ে বইগুলো নিয়ে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বলে দেওয়া হবে কোন দিন কারা এসে বই সংগ্রহ করবে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এটি করা হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
তবে এই নিয়মটি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। তাদের ক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বই নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তাদের অভিভাবকরাই স্কুলে গিয়ে বই নিতে পারবেন। প্রয়োজনে বই শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে দিতেও বলা হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিটি ক্লাসের জন্য বই বিতরণের সময় তিন দিন বরাদ্দ থাকবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করে বই বিতরণ করবে। আগের ক্লাসের রোল নম্বর মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন দিনে স্কুলে গিয়ে বই নিতে পারবে।
প্রসঙ্গত, মহামারির ঝুঁকির কারণে দেশে এবার কোনো বই উৎসব হচ্ছে না। তবে নতুন বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার পাঠ্যবই বিতরণ অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করে তিনি এই নির্দেশনা দেন।
২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি বই উৎসবের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর বিনামূল্যে প্রায় চার কোটি ১৭ লাখ শিক্ষার্থীদের মোট সাড়ে ৩৪ কোটি বই দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার বই দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে প্রায় ৯ হাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে।