সারাদেশে স্কুলে স্কুলে বই উৎসব, উল্লসিত শিক্ষার্থীরা
১ জানুয়ারি ২০২১ ২২:৪২
ঢাকা: নতুন বছরের প্রথম দিন। এবছর পুরনো নিয়মে বই উৎসব না হলেও প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছে সরকারের শিক্ষা বিষয়ক দুই মন্ত্রণালয়। সারাদেশের স্কুলগুলোতে নতুন বই হাতে পেয়ে উল্লসিত শিক্ষার্থীরা। কারণ নতুন বই পড়ার মজাই অন্যরকম। করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার বই বিতরণ করা হচ্ছে। উৎসব চলবে আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। সারাদেশ থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো বই উৎসবের খবর—
নেত্রকোণা
জেলার স্কুলগুলোতে সকাল থেকে শুরু হয়েছে বিনামূল্যে সরকারি বই বিতরণ উৎসব। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) বই বিতরণ উপলক্ষে নেত্রকোণা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই উৎসব শুরু হয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান এক শিক্ষার্থীর হাত স্যানিটাইজ করার পর বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন।
এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব জিয়া আহমেদ সুমন, অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) মো. সোহেল মাহমুদ,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গফুরসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, জেলায় প্রাক প্রাথমিকসহ প্রাথমিকে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭৪টি বই বিতরণ করা হবে। এরই মধ্যে ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭২টি বই এসে পৌঁছেছে নেত্রকোণায়। বাকি বই কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা থেকে নেত্রকোণায় চলে আসবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গফুর জানান, জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২২৯ জন সাধারণ, ৪২ হাজার ৫০১ জন এবতেদায়ি, ২৭ হাজার ৫৮৭ জন দাখিল ও ৫ হাজার ৮০০ জন কারিগরি শিক্ষার্থী মিলিয়ে মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার ১২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭০০ বই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে ১২ লাখ ২০ হাজার ২২৮টি বই এসেছে। বাকি বই ঢাকা থেকে দ্রুত এসে পৌঁছাবে।
সুনামগঞ্জ
জেলায় বিভিন্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের কয়েকটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. জসীম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
জেলা প্রশাসক এসময় নতুন বইয়ের প্রথম পাতায় ছাপানো মুজিবর্ষের লোগো দেখিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও ইতিহাস জানার জন্য ও সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বরিশাল
নতুন বছরের প্রথম দিন বরিশালে অনুষ্ঠিত হয়েছে বই উৎসব। সীমিত পরিসরে জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নতুন বই। বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেয়ে বেজায় খুশি ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় নগরীর মল্লিকবাড়ি রোডের সিসটারস ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হলরুমে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান।
বই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অজিয়র রহমান বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেই কথা চিন্তা করে নতুন বই বছরের প্রথম দিনই বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের কাছে শিক্ষার উন্নয়নের প্রাধান্য বেশি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।’
বই বিতরণ উৎসবে বরিশাল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত বিশ্বাস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লতিফ মজুমদার ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান মধু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাহাফুজা বেগম।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার জানান, জেলায় ১ হাজার ৫৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ ৩২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য ১৩ লাখ নতুন বই এসেছে। আগামী ২ দিনের মধ্যে শতভাগ শিশুর হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।
এদিকে জেলায় ৭৯৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য নতুন বইয়ের চাহিদা ২৮ লাখ ১৯ হাজার ১৫০টি। এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ২১ হাজার ৮৪৩টি নতুন বই এসে পৌঁছেছে। যা মোট চাহিদার ৩২.৭০ ভাগ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
মুন্সীগঞ্জ
করোনা মহামারির কারণে নতুন বছরে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে স্কুলে স্কুলেই বিতরণ করা হচ্ছে ‘নতুন বই’। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) বছরের প্রথম দিন থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলার রামপাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৬ জন শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে খাতা বিতরণ করা হয়। এসময় ১ম, ২য় ও ৪র্থ শ্রেণির ৩৭৬ জন শিক্ষার্থী ও রামপাল এন বি এম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৯০ জন বালিকার মাঝে বই বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার।
বই বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান মো. নাজমুস শোয়েব, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাসুদ ভূইয়া, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত, সহকারী জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসিমা খানমসহ অন্যরা।
কুড়িগ্রাম
সারাদেশের মতো শুক্রবার থেকে কুড়িগ্রামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন পাঠ্য বই বিতরণ শুরু হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে জেলার এক হাজার ৮৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ধাপে ধাপে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
নতুন বছরের প্রথম দিনে নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের কুলামোয়া মাঝিয়ালীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এসময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজাউদ্দৌলা, নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাসুম ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান।
এদিকে কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম দিনে চতুর্থ শ্রেণির দুই শিফটের ১২০ জন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্য বই তুলে দিয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন। একইভাবে জেলা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে এবছর সেভাবে বই উৎসব না হলেও আমরা বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
ঝিনাইদহ
সারাদেশের মতো ঝিনাইদহেও করোনা মহামারির মধ্যে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ।
এসময় শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিভাবকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ করা হয়েছে। করোনা মহামারির মাঝেও সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে বই বিতরণ করায় খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জেলা প্রশাসক জানান, আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলার ৬ উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৪ লাখ ৯১ হাজার ৮৩০টি বই বিতরণ করা হবে।
রংপুর
নতুন বছরের প্রথম দিন সকালে রংপুর মুন্সিপাড়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে ছাত্র ছাত্রীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান।
অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। নতুন বই হাতে পেতে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। রংপুর জেলায় এ বছর মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৫ লাখ ও প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ লাখ ৪৩ হাজার বই বিতরণ করা হবে।
এছাড়াও দাখিল পর্যায়ে ৮ লাখ, এবতেদায়িতে ৪ লাখ ৮৭ হাজার এবং ভোকেশনালে ৯৬ হাজার বই বিতরণ করা হবে।