Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রান্সফ্যাটের হুমকিতে দেশ, তৈরি হচ্ছে নীতিমালার খসড়া


২ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:৩৬

ঢাকা: ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্সফ্যাটি এসিড) নিয়ন্ত্রণে তৈরি হয়েছে নীতিমালার প্রথম খসড়া। জনস্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক এই ট্রান্সফ্যাট থেকে রক্ষায় নীতিমালাটি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। কিন্তু সেটি চূড়ান্ত হতে অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে আরও ৬ মাস। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৮০ জন মানুষ হৃদরোগজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৭৬ জনের এমন মৃত্যুর জন্য দায়ী খাদ্যে যুক্ত করা ট্রান্সফ্যাট। অথচ এই ফ্যাটের ক্ষতি সম্পর্কে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষই ধারণা রাখেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতেই নীতিমালাটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, সাধারণত প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বেকারি পণ্যে বিদ্যমান ট্রান্সফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট এক ধরণের ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান যা রক্তের এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। অপরদিকে, এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তবাহী ধমনিতে জমা হয়ে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ট্রান্সফ্যাট ঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে ১৫টি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার মানুষ সার্বিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর মধ্যে ৪.৪১ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। শিল্পকারখানায় উৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে সর্বোত্তম নীতি অর্থাৎ সব ফ্যাট, তেল এবং খাবারে প্রতি ১০০ গ্রাম ফ্যাটে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ পরিমাণ ২ গ্রামে সীমিত করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। অথবা পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল- পিএইচও’র উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

সম্প্রতি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষণায় ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও (ডালডা) ব্র্যান্ডসমূহের মোট ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯২ শতাংশ নমুনায় ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০.৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যা ডব্লিউএইচও’র সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি। বাংলাদেশে পিএইচও বা ডালডা সাধারণত ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স ও বেকারিপণ্য তৈরি এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও বিএফএসএ’র সদস্য মঞ্জুর মোরশেদ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নীতিমালা তৈরি একটি কারিগরি কাজ। সুতরাং চাইলেই দ্রুত করা সম্ভব নয়। এর জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়া আছে। যেমন প্রথম খসড়ার পরবর্তী খসড়াটি ৪৫ দিন ওয়েবসাইটেই রাখতে হবে। সেখানে বিভিন্ন শিল্প মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিতে হবে। এভাবেই ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া শেষ করেই এটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত নীতিমালাটি তৈরির কাজ শেষ করা যায়।’

সূত্র জানায়, খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের উচ্চমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে কোনো নীতিমালা না থাকায় চরম হুমকির মুখে রয়েছে ভোক্তারা। এ পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে করণীয় তুলে ধরতে এবং ভোক্তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৯ দফা দাবি তুলেছে কয়েকটি সংস্থাটি। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) সম্মিলিতভাবে এসব দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে গঠিত কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে আমাদের কাছে দিয়েছে। এখন সেটি কারিগরি কমিটিতে পর্যালোচনা করে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হবে। এরপরই চূড়ান্ত খসড়া পাঠানো হবে আইনমন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য।’ এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও ৫-৬ মাস সময় লেগে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

ট্রান্সফ্যাট ট্রান্সফ্যাটি এসিড ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট হৃদরোগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর