যুক্তরাষ্ট্রে ৭ দশক পর কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে
২ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:১২ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:৩৬
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬৭ বছর পর মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন লিসা মন্টগোমারি নামে একজন নাগরিক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে দণ্ড কার্যকরে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন আদালত। তবে দেশটির আপিল বিভাগ জানিয়েছেন, সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে লিসার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকছে না।
২০০৪ সালে মিসৌরিতে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিলেন লিসা। পরে ওই নারীর গর্ভের সন্তানকে চুরি করার চেষ্টা করেন তিনি। ইন্ডিয়ানার টেরে হাউতে এখন বন্দি রয়েছেন লিসা। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে প্রায় ৭০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
এর আগে, গত ৮ ডিসেম্বর লিসা মন্টগোমারিকে বিষযুক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ নির্ধারণ করা ছিল। তবে লিসার আইনজীবী কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। পরে বিচার বিভাগ থেকে ১২ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে লিসার আইনজীবীরা বলেন, স্থগিতাদেশ থাকাকালীন নতুন করে তারিখ নির্ধারণের বিধান নেই। তাদের এই যুক্তি মেনে নেন একটি আদালতও।
তবে শুক্রবার (১ জানুয়ারি) মার্কিন আপিল বিভাগের বিচারকদের একটি প্যানেল সিদ্ধান্ত দেন, বিচার বিভাগ থেকে লিসার মৃত্যুদণ্ডের তারিখ পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত সঠিক। ফলে এটি কার্যকর করা যাবে। তবে লিসার আইনজীবীরা বলছেন, এই আদেশ পুনঃবিবেচনা করার জন্য তারা পিটিশন দায়ের করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সবশেষ ১৯৫৩ সালে বনি হেডি নামে এক নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। মিসৌরির একটি গ্যাস চেম্বারে রেখে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান জারি থাকলেও কেউ এই দণ্ডে দণ্ডিত হননি। এ শতকের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয়ভাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রদ করা হয়। গত বছর অবশ্য ট্রাম্প সেই বিধান চালু করেছেন। ফলে ফের কেন্দ্রীয়ভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে তা জাতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় আদালতে অথবা একেকটি রাজ্যের আদালতে পরিচালিত হতে পারে। জাল টাকা বা মেইল চুরির মতো সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চলে যায় কেন্দ্রীয় আদালতে। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো রাজ্য বা কেন্দ্র— দুই আদালতেই পরিচালিত হতে পারে।
এর মধ্যে ১৯৭২ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশটিতে যেকোনো ধরনের আদালতের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রদ করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত যারা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডি হয়েছিলেন, সেসব সাজাও বাতিল করা হয়। পরে ১৯৭৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকেই বলা হয়, রাজ্য চাইলে তাদের আদালতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করতে পারে, তবে কেন্দ্রীয় আদালতের জন্য তা রদ থাকবে। ১৯৮৮ সালে আবার সরকার নতুন আইন পাস করার মাধ্যমে কেন্দ্র পর্যায়েও মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করে। পরে আবার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান স্থগিত করা হয়, যা গত বছর চালু করেন ট্রাম্প।