‘দেশে পার্লামেন্ট আছে, ব্যুরোক্রেসি আছে তবে মানুষের অধিকার নেই’
২ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৪৮
ঢাকা: দেশে সরকার আছে, পার্লামেন্ট আছে কিন্তু মানুষের অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সঙ্গে নিজের জীবনের নানা ঘটনা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কামাল ভাইকে আমি ফরিদপুরে নেতা মনে করি না, আমি তাকে জাতীয় নেতা হিসেবে দেখেছি। তাকে জাতীয় নেতা হিসেবে দেখতে চাই। যারা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ স্মৃতি পরিষদ গঠন করেছেন তারা কামাল ভাইয়ের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।`
তিনি বলেন, `আমরা একটা খুব খারাপ সময় অতিক্রম করছি। চরম দুঃসময় অতিক্রম করছি, সেটা শুধু বাংলাদেশ নয়, ফরিদপুর নয়। গোটা পৃথিবী এখন একটা চরম দুঃসময় কাটাচ্ছে। একদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের আগ্রাসন অন্যদিকে গণতন্ত্রকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া, কতৃত্ববাদ, একনায়কতন্ত্র। সেইসঙ্গে দাম্ভিকতা, অহংকার, সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করা যেন এই সময়কার রাজনীতির একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, `আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন এখানে সবই আছে, সরকার আছে, বলা হয় গণতন্ত্র আছে, পার্লামেন্টে আছে, ব্যুরোক্রেসি আছে কিন্তু মানুষের অধিকার নেই। আমরা কথা বলতে পারবো; এ কথা আমরা বলতে পারব না।`
তিনি আরও বলেন, `১৯৭১ সালে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সমাজ তৈরি করার। বারবার আমাদের সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও একথা আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারছি না যে আমরা স্বাধীন, আমরা স্বাধীন- গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি, এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে।`
গত বছর ১১৭ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আইনে মামলা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, `আজকে শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক বলছেন বিএনপির ভোট ডাকাতির রেকর্ড নাকি কেউ ভাঙতে পারবে না। উনি কী ভাঙতে চান? রেকর্ড ভাঙতে চান বলেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে চরম ভোটডাকাতি করেছেন। এ কোন সমাজে আসলাম, এ কোন সমাজে বাস করছি। যেখানে রাজনীতিবিদরা বলছেন তারা ভোটডাকাতির রেকর্ড ভাঙতে চান। এভাবেই যদি আমরা এগিয়ে যেতে থাকি, তাহলে কোনো দিনই আমরা ৭১ সালের স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারবো না।’
বাংলাদশ একটি হাইব্রিড রেজিমের দেশ। এখানে গণতন্ত্র শংকর গণতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, `আজকে কোথায় যাবেন, কোনখানে যাবেন। ২০২০ সালে ৩০০ জন মানুষ বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়েছে। আজ বছরের দ্বিতীয় দিন, দ্বিতীয় দিনে আমরা অনেক আশা করতে চাই, অনেক স্বপ্ন দেখতে চাই। এ বছরটা আমাদের জন্য অনেক সুন্দর হয়ে আসবে, যে কষ্ট গেল করোনা নিয়ে, একটা অচল ২০২০ সাল এবং সবকিছু মিলিয়ে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। এর থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই, সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই।`
চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সহিদুল ইসলাম বাবলুর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জহুরুল ইসলাম সাহাজাদা, যুগ্ন মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মহিলা দলের যুগ্ন সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের ভাতিজা চৌধুরী কাসেদ, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কামাল ইবনে ইউসুফের জ্যেষ্ঠ মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, ওলামা দলের আহ্বায়ক নেছারুল হক, যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান পিংকু, বিএনপি নেতা আব্দুর রহিম, ফরিদপুরের ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল লতিফ প্রমুখ।
এ ছাড়া স্মরণসভায় প্রয়াত বিএনপি নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সহধর্মিণী শাহেলা কামাল, দৈনিক নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর উপস্থিত ছিলেন।
স্বরণসভায় ওলামা দলের আহ্বায়ক নেছারুল হক দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।