Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বামী-স্ত্রী মিলে হাতিয়ে নিয়েছে ডাক বিভাগের সাড়ে ৩ কোটি টাকা


৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:৩৭

ঢাকা: ভুয়া মানি অর্ডারের মাধ্যমে ডাক বিভাগের সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূল হোতা ফজলুল হকসহ ৬ জনকে আগারগাঁও থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। ডাক বিভাগের তিন কর্মচারীর যোগসাজসে প্রতারণা করতো চক্রটি।

মূলত ২০১৮ সালের ‘এ্যারোলাইট বায়োগ্যাস’ নামের একটি সংগঠন খুলে কৃষকদের জন্য জৈব সার পাঠাতেন ফজলুল হক। এজন্য তিনি ডাক বিভাগের ভিপি সার্ভিস ব্যবহার করতেন। কৃষকদের কাছে পাঠানো সারের সুযোগে তিনি অতিরিক্ত নকল মানি অর্ডার পাঠাতেন ডাক অফিসে। এভাবেই শুরু হয় ফজলুল হকের অভিনব প্রতারণা। দীর্ঘ অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে আসে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

রোববার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় র‍্যাব সড়র দফতরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ফজলুল হক আশরাফ (৫২) ও তার স্ত্রী আসমা আক্তার শিমু (৩৮), পোস্টাল অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ডলি রানী সাহা, মো. আমজাদ হোসেন, ও লিংকন সাহা। তবে এ ঘটনায় এখনও পলাতক রয়েছেন মো. বশির হোসেন ও মো. বাশার আলম নামের দু’জন। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা, জিপিওর বিপুল পরিমাণ সিল এবং মানি অর্ডারের ফরম উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘রোববার ভোরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলা এলাকা থেকে ফজুলল হক আশরাফ (৫২) ও তার স্ত্রী আছমা আক্তার শিমুকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। তারা পোস্টাল জালিয়াতি ছাড়াও এই দীর্ঘদিন ধরে নানান প্রতারণা চালিয়ে আসছিলো।’

গ্রেফতারকৃত প্রতারক দম্পতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এদিন বিকেলে ডাক বিভাগের আমজাদ আলী (৫৫), মোস্তাফিজুর রহমান (৫২) ও ডলি রাণী সাহা (৫৩) এবং তাদের সহযোগী লিংকন সাহা (২৪) একজন সিভিলিয়ানকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

আশিক বিল্লাহ বলেন,‘ গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা জিপিওর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন যে, একটি প্রতারক চক্র পোস্টাল মানি অর্ডার জাল করে অভিনব উপায়ে টাকা উত্তোলন করছে। গত জুন-জুলাই এর দিকে কয়েক হাজার জাল মানি অর্ডারের সন্ধান পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ঢাকা জিপিওতে এই রকম ৮ হাজার জাল মানি অর্ডারের পাওয়া যায়। এছাড়া, মিরপুর ও নিউমার্কেট পোস্ট অফিসেও এখন পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক জাল মানি অর্ডারের সন্ধান পাওয়া যায়। সন্দেহভাজন প্রতারক হিসেবে জিপিও কর্তৃক ফজলুল হক, আবুল বাশার এবং শিমু বেগমের নামে মামলা করা হয়। মামলার পর আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে এই বিষয়ে সহায়তা চেয়ে র‍্যাবের কাছে অভিযোগ করে জিপিও কর্তৃপক্ষ।’

প্রতারক ফজলুল হক ২০১৮ সালে প্রথমে পোস্টাল সার্ভিসের কয়েকজন কর্মচারীর সহায়তায় মানি অর্ডারের টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করে জালিয়াতি শুরু করেন। তিনি নিজেকে পথশিশু ফাউন্ডেশন, সানায়োর ফাউন্ডেশন এবং এ্যারোলাইট বায়োগ্যাস নামে কয়েকটি সংগঠনের প্রধান বলে দাবি করেন। তিনি পথশিশুদের উন্নয়নের জন্য তাদের দিয়ে কাগজের ঠোংগা বানিয়ে বিক্রয় করে থাকেন বলে জানান। স্বল্পমূল্যে এই কাগজের অব্যাহত সরবরাহের জন্য তিনি প্রথমে সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড চেয়ারম্যানদের কাছে চিঠি দেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টে এক রিটের মাধ্যমে সমস্ত শিক্ষাবোর্ড থেকে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রতিটি খাতা ৬০ পয়সা মূল্যে কেনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন তিনি। সে অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষকদের কাছ থেকে ৬০০ টাকার বিনিময়ে ১০০০ খাতা কেনা শুরু করেন।

লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘তখন থেকেই তিনি জিপিওর মানি অর্ডার ফরম জাল করে ৬০০ টাকা মূল্যের মানি অর্ডার বিভিন্ন শিক্ষকদের নামে পাঠাতে শুরু করেন। আসল মানি অর্ডারের মতো সই এবং সিল সম্বলিত নকল মানি অর্ডারগুলো কৌশলে জিপিওসহ বিভিন্ন পোস্ট অফিসে বিতরণ চ্যানেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও তিনি ই-কমার্সের ক্যাশ অন ডেলিভারির আদলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকদের কাছে তথাকথিত জৈব সার পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। জৈব সার পাঠানোর এই প্রক্রিয়াতে তিনি পোস্টাল সার্ভিসের ভিপি (Value Payable) ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে তিনি জৈব সারের ভুয়া বিক্রি দেখিয়ে তার একই পদ্ধতিতে জাল মানি অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে শুরু করেন। এ প্রক্রিয়ায় তিনি নিজেই মানি অর্ডারের প্রাপক।

এছাড়া কৃষকদেরকে সৌদি খেজুর গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সে প্রলোভন দেখান ফজলুল হক। এর অংশ হিসেবে তিনি রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ১০০ টাকা ধার্য করে বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠান পথশিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পোস্টাল অর্ডারের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেন।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডাক বিভাগ থেকেও তদন্ত হচ্ছে। তবে প্রতারণার অপরাধে র‍্যাবও মামলা দায়ের করবে বলে জানানো হয়েছে।

ডাক বিভাগ প্রতারণা ফজলুল হক ভুয়া মানি অর্ডার র‍্যাব


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর