Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত এখনো থেমে যায়নি: শেখ হাসিনা


৪ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:০৭

ঢাকা: পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর একটি মহল বাংলাদেশকে ব্যর্থ করার যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল সেই ষড়যন্ত্র এখনো থেমে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ আবার উন্নতি করতে পারে— এটা তারা কখনো মানতে চায়নি। বরং বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়সহ সবকিছুই যেন নসাৎ হয়ে যায়, এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। সে চক্রান্ত চলছে। এখনো একেবারে থেমে যায়নি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত ছিলেন।

আরও পড়ুন-

আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সংগঠন। তাই সবসময় আমিও সংগঠনের ওপর জোর দিয়েছি বেশি। কারণ সংগঠন শক্তিশালী না থাকলে কোনো কাজ সফলভাবে করা যায় না। আর যেকোনো রাজনীতিবিদের জন্য আদর্শ নিয়ে চলা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সততা ও আদর্শ থাকলে আর লক্ষ্যস্থির থাকলে যেকোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটি দেখিয়ে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জাতির পিতার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইগুলো পড়ারও পরামর্শ দেন সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি গোয়েন্দা নথির ওপর ভিত্তি করে লেখা ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটিও পড়তে বলেন তিনি।

ছাত্রলীগ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অন্য কোনো দল খুব বেশি একটা পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসল, তার আগে সে মদত দিয়েছিল খন্দকার মোশতাককে এবং মোশতাককে হটিয়ে যখন নিজে রাষ্ট্রপতি হলো, এরপর তার কাজ ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জুলুম-অত্যাচার করা। একদিকে তাদের প্রলোভন দিয়ে দলে টানানোর চেষ্টা, আর সেটা না হলে তাদেরকে গুম-খুন-হত্যা করা। সেসময় বহু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীনতার আগে ও পরে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী সংসদ সদস্যকে যারা হত্যা করেছে, তাদের অনেকে কারাগারে ছিলেন। জিয়াউর রহমান এসব খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধী-মানবতাবিরোধী কাজের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের দিয়েই রাষ্ট্রপরিচালনার কাজ শুরু করে। ফলে বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি অর্জন করতে পারেনি। তাছাড়া ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্যই বেশি ব্যস্ত ছিল। সে দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে কখন? আর সেটা করার ইচ্ছাও তার ছিল না। কারণ এই স্বাধীনতাটাকে ব্যর্থ করাটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়— সবকিছুই যেন নসাৎ হয়ে যায়, এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এবং সে চক্রান্ত চলছে। এখনো একেবারে থেমে গেছে, তা নয়।

সে অবস্থা থেকে ফের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়েই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, রিজার্ভ বেড়েছে। সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি, আমাদের লক্ষ্যই ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করব। বাংলাদেশ অন্ততপক্ষে উন্নয়নের একটা পর্যায়ে যাবে। সে পর্যায়টা আমরা অর্জন করেছি। জাতির পিতা যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তৈরি করে দিয়েছিলেন। আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এটা ধরে রাখতে হবে।

‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা কিছুটা থমকে গেছি। তবে আমি এটুকু বলব, সংগঠনটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই করোনাভাইরাসে আমাদের ছাত্রলীগ অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। সেজন্য ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই,’— বলেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা।

করোনাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত মানুষের আপন আত্মীয়-স্বজন লাশ ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে অথবা অসুস্থ হয়ে গেলে তাদের হাসপাতালে নিচ্ছে না, হাসপাতালে নিয়ে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে না— ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা কিন্তু সেখানে চলে গেছে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করেছে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। করোনাভাইরাসে মানুষ এমনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। সবকিছু যখন বন্ধ হয়ে গেল, তখন সবাই তো হাত পাততে পারত না। তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া, রিলিফ পৌঁছে দেওয়া— সে কাজটিও আমাদের ছাত্রলীগ করেছে।

ছাত্রলীগকে নিয়ে গর্বিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি যখন আহ্বান করলাম, আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেরা নেমে পড়ল ধান কাটতে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ— তারাও নেমেছে। কিন্তু আমি আগেই বললাম, ছাত্রলীগ তো সবসময় অগ্রগামী দল। তারাই পথ দেখিয়ে এগিয়ে যায়। আর এই জন্যই ছাত্রলীগ বয়সেও আওয়ামী লীগ থেকে বড়, এটাও ঠিক। এর মাধ্যমে ছাত্রলীগ আরও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কোনো কাজই যে অবহেলার না, ছোট না— যে কৃষক আমাদের বেঁচে থাকার রসদ জোগায়, সেই কৃষকের ধান কেটে দিয়ে তোমরা এটি প্রমণ করেছ।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত ও কেআইবি মিলনায়তন প্রান্তে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। এছাড়া ১৯৮১ সাল থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর