পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ৯ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল
৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৫৭
ঢাকা: পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জন আসামি। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) এ আপিল দাখিল করা হয়। তবে আপিল দায়েরের বিষয়টি বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন আপিল দায়েরকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম।
তিনি বুধবার (৬ জানুয়ারি) আপিল দায়েরের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে বলেন, `আপিলে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে খালাস দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।`
উচ্চ ও নিম্ন আদালতের রায় সংযুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ একটি আপিলে পৃষ্ঠা সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৬২৩টি। ১৪০টি ভলিউম করে এই আপিল দাখিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৫৫ হাজার ৬২৩ পৃষ্ঠার আপিলের ১৪টি সেট দাখিল করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট শাখায়। এ নিয়ে এক আপিল দাখিল করতে গিয়ে ১৪টি সেটে মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৭২২ পৃষ্ঠা। আর মোট ভলিউম হয়েছে ১ হাজার ৯৬০টি। ব্যয় হয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
এদিকে অন্যান্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে যেন পেপারবুক দাখিল করতে না হয় সেজন্য প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করেছেন আসামিপক্ষে আপিল আবেদন দায়েরকারী আইনজীবী মো. তৌফিক হোসেন।
এ মামলায় আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম. আমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ একটি পূর্ণাঙ্গ আপিল দাখিল করেছে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে। অন্য আপিলগুলোতে পেপারবুক দাখিল থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। সেজন্য আমরা পেপারবুক দাখিল থেকে অব্যাহতি চেয়ে শুধু মেমো অব আপিল করার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছি।’
যারা আপিল করেছেন
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নয় আসামি হলেন, কামাল মোল্লা, আব্দুল মুহিত, ইউসুফ আলী, বজলুর রশিদ, সহিদুর রহমান, ফজলুল করিম, এ বি এম আনিসুজ্জামান, এমডি মনিরুজ্জামান ও এমডি আবু সাইদ আলম।
এই ৯ জন আসামির বিরুদ্ধে উচ্চ ও নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ এসেছে। এর আগে হাইকোর্টে খালাস ও সাজা হ্রাস হওয়া প্রায় আড়াইশত আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিলে বিচারিক আদালতের রায়, হাইকোর্টের রায়, আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৫ এ।
অন্যদের ক্ষেত্রে যেন এসব নথি না দিতে হয়, সে ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। তিনি অনুমতি দিলে ১৩ জানুয়ারির মধ্যে তাদের বিষয়ে আপিল করতে পারবো বলে জানান আসামি পক্ষের আইনজীবী।
এদিকে সম্প্রতিকালে হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত এবং যাদের সাজা কমনো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাস দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার হাইকোর্টের রায় প্রকাশ হয়।
রায় প্রকাশের পর ৮ জানুয়ারি প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছিলেন, রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। বাকি ১২ জনের মধ্যে আটজনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও অন্য চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে ১৮৫ জনকে। তার ভেতরে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন।
মামলায় ১৩ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন দুজনকে। ১৫৭ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন, এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ১৩ জনকে সাত বছর করে, ১৪ জনকে তিন বছর করে, এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে দুজনকে, মোট ৫৫২ জনকে সাজা এবং ২৮৩ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মোট মারা গেছেন ১৪ জন।
পৃথিবীর ইতিহাসে আসামির সংখ্যা ও ফাঁসির দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। সেদিন বিডিআর জওয়ানরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।