Sunday 01 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরণ অনশন করব: রানা দাশগুপ্ত


৯ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৪৫ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৪৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভাঙচুর হওয়া দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়িকে জাদুঘর করার বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা দিতে সরকারকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। এর মধ্যে এই ঘোষণা না এলে ১৮ জানুয়ারি থেকে ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বাড়িটিকে জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারি সুষ্পষ্ট সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা চাই। না হলে ১৮ জানুয়ারির পর এই বাড়ির সামনে আমরা আমরণ অনশনে বসব। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে কিছু দখলবাজ ছাড়া চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকরা আছেন। এরপরও বলছি, কে পাশে থাকবে আর কে থাকবে না— সেটি বিবেচনা করব না। কেউ পাশে না থাকলেও আমি একাই আমৃত্যু অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর রহমতগঞ্জে দেশপ্রিয়র বাড়ির সামনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি। দুঃসাহস দেখিয়ে বুলডোজার দিয়ে কিছু দুষ্কৃতিকারী এই বাড়িতে আঘাত করেছে। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের এই বাড়ি ১৯৭২ সালে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। পরে এক ব্যক্তি সেই জায়গা লিজ নিয়ে প্রথমে বাংলা কলেজ, পরে শিশুবাগ স্কুল পরিচালনা করছিলেন। একটি দখলদার চক্র জাল দলিল-দস্তাবেজ বানিয়ে সেই জায়গায় প্রবেশ করেছে। স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের, শিক্ষকদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। অথচ পুলিশ ছিল নির্বিকার। পুলিশ দখলদারকে সহযোগিতা করেছে। আমরা পুলিশের এই ভূমিকার সঠিক তদন্ত দাবি করছি। আমরা জানতে পেরেছি, দুর্বৃত্তরা ১৮ কোটি টাকা নানা জায়গায় নানাজনকে বিলিবণ্টন করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘দখলদার ব্যক্তি বলেছেন— তিনি যাত্রামোহন সেনগুপ্তের উত্তরাধিকার মিলন সেনগুপ্তের কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন। এই জমির বাজারমূল্য প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। যদি মিলন সেনগুপ্ত ৩৮ কোটি টাকা পেয়ে থাকেন, তাহলে তিনি পর্ণকুটিরে থাকেন কেন, তার পরনে ছেঁড়া শার্ট কেন, তিনি অনাহারে-অর্ধাহারে থাকেন কেন? মিলন সেনগুপ্ত নিজেই বলেছেন— তিনি কোনো জমি বিক্রি করেননি।’

আন্দোলনকারীদের চরিত্রহননের চেষ্টার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেকে বলেছেন, এলাকার কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকে ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে নাকি তিনি দ্বিমুখী আচরণ করছেন। আমি বলেছি— সেদিন যদি সুমন আমার পাশে না থাকত, তাহলে আমার পক্ষে একা এই বাড়ি ভাঙচুর ঠেকানো সম্ভব ছিল না। দখলদারের মেয়ে বলেছে, আমি নাকি ৩০ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। এই টাকা তারা দেয়নি বলে নাকি আমি বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়েছি। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই— টাকার কাছে অনেকে বিক্রি হয়, কিন্তু এই রানা দাশগুপ্ত বিক্রি হয় না। আমার প্রাণ যাবে, কিন্তু সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই থেকে বিচ্যুত হব না।’

‘কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে দখলদারের পরিবার বলেছে— আমি নাকি তাদের কাছে শ্রদ্ধেয়, কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই— অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে অন্যায়কারীর কাছে আত্মসমর্পণের চেয়ে বিতর্কিত হওয়া অনেক গৌরবের। চট্টগ্রাম আদালত ভবন ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল, আমি সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। কোনো ব্যক্তিস্বার্থে আমি আদালত ভবন রক্ষার লড়াই সেদিন করিনি। বিবেকের তাগিদে করেছিলাম। এখনও বলছি, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটিতে আমি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়ব,’— বলেন রানা দাশগুপ্ত।

সমাবেশে সংহতি জানান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই ভবনটি কোনো সাধারণ ভবন নয়। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি আছে এই ভবনে। যাত্রামোহন সেনের এই বাড়ি ভাঙার পেছনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হাত আছে। এই বাংলাদেশ সব সম্প্রদায়ের মানুষ যুদ্ধ করে অর্জন করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা সবাই যুদ্ধ করেছি। কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না। যাত্রামোহন সেনের বাড়িটি এই চট্টগ্রাম শুধু নয়, সারাদেশের সম্পদ। আমরা সবাই মিলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছ থেকে এই বাড়ি রক্ষা করব।’

আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এই জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি। আমরা সবাই জানি, অর্পিত সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না। তাহলে এটা কিভাবে ব্যক্তি মালিকানায় গেল? এই জায়গার কেয়ারটেকার জেলা প্রশাসন। আমাকে জেলা প্রশাসক নিজে বলেছেন, জায়গাটি বিক্রি করা কিংবা দখল বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে উনি কিছুই জানতেন না। এখানেই আসল রহস্য। তাহলে এখানে পুলিশ কিভাবে এলো? মনে হচ্ছে কাউকে না কাউকে ম্যানেজ করে এই সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা হচ্ছে। এই বাড়ি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। যারা এই বাড়ি ভাঙচুর করেছে আমি তাদের ধিক্কার জানাই। বাড়িটি রক্ষায় যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, আমি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সবসময় এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকব। দখলদারদের সঙ্গে আপোষের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

ঐক্য পরিষদের নেতা পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও শ্যামল পালিতের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জীনবোধি ভিক্ষু ও রনজিৎ দে, জাসদ নেতা ইন্দুনন্দন দত্ত, আইনজীবী রুবেল পাল, চন্দন তালুকদার, অশোক কুমার দাশ, অনুপম চক্রবর্তী।

বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, পূজা ‍উদযাপন পরিষদ, যুব ঐক্য পরিষদ, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, আইনজীবী বিজয়া সম্মিলন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয়। সমাবেশ শেষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

আ জ ম নাছির উদ্দিন আমরণ অনশন আমরণ অনশনের ঘোষণা জাদুঘর করার দাবি টপ নিউজ দেশপ্রিয়র বাড়ি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী রানা দাশগুপ্ত সরকারকে আলটিমেটাম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর