অধ্যাদেশের অপেক্ষায় আটকে আছে এইচএসসির ফল
১০ জানুয়ারি ২০২১ ১০:১৫
ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে বাতিল হওয়া উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করা হলেও এখনই সেটি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। অধ্যাদেশের অপেক্ষায় আটকে আছে এই পরীক্ষার ফল।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমে ৩১ ডিসেম্বর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হলেও পরে সেটি পিছিয়ে যায়। বোর্ড বলছে, অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি না হওয়ায় নির্ধারিত তারিখে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে ফল প্রকাশের জন্য বলেছি। ৪ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সভা হওয়ার কথা ছিল। এটা এখন ১১ তারিখে হওয়ার কথা। সেখানে ফল প্রকাশ অধ্যাদেশ জারি করা হলে সেটি রাষ্ট্রপতি সই করবেন। তারপর আমরা একটি তারিখ দিয়ে ফল প্রকাশ করব।’
তিনি বলেন, ‘এইচএসসির ফল আমরা প্রায় প্রস্তুত করে রেখেছি। শিক্ষার্থীদের দুর্ভাবনার কিছু নেই। চলতি মাসেই ফল প্রকাশের জন্য সবরকমের চেষ্টা করছে সরকার।’
এদিকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড বলছে, ‘শিক্ষার্থীকে কোন গ্রেড দেওয়া হবে, কেন দেয়া হবে- সে বিষয়ে একটি নীতিমালার প্রস্তাব করা হয়েছে। নীতিমালায় ফলাফলের মানদণ্ড কী হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় এই নীতিমালা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করবে। এরপরে জারি হবে অধ্যাদেশ।
এদিকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিতে কথা বলে জানা গেছে, এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্যও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। অধ্যাদেশ জারি হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে ২৫ নভেম্বর আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। এসএসসির ফলের ওপর ৭৫ শতাংশ এবং জেএসসি ফলের ওপর ২৫ শতাংশ মানবণ্ঠন করে তৈরি করা হবে গ্রেড।
ওই সময় ফল তৈরির জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে দেন শিক্ষামন্ত্রী। তাদের সমতা আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে ফলাফল তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পর এই নির্দেশনা অনুযায়ী তারা একটি নীতিমালা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠান। যার ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব বৈশিষ্ট্য ও তথ্য।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফল তৈরির জন্য এই নীতিমালা তৈরি করতে নিয়মিত বৈঠক হয়েছে। ফল পেয়ে কোনো শিক্ষার্থী যেন বঞ্চিতবোধ না করেন এবং কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে যেন অন্যায্যতা না হয়- সেদিকগুলো সবচেয়ে বেশি বিবেচনা করা হয়েছে।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জানুয়ারি ২১ তারিখ ফল প্রকাশ করতে সবধরনের চেষ্টা চালাবে বোর্ড। মন্ত্রণালয়েরও একই চেষ্টা থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া ফল প্রকাশের তারিখ বোর্ড কোনোভাবেই জানাতে পারবে না। ২১ তারিখটি আমাদের বর্তমান লক্ষ্য। এর আগে বা পরেও হতে পারে।’
এদিকে শিক্ষার্থীর মোবাইলে এসএমএস করে এইচএসসির ও সমমানের ফল প্রকাশ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এজন্য প্রি-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বোর্ডগুলো। সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে এ রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। গেল বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করার আহ্বান জানিয়েছে টেলিটক।
টেলিটকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের প্রি-রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। ঘরে বসে ফল পেতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে HSC লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষাবোর্ডের নাম দিয়ে স্পেস দিয়ে রোল লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে 16222 নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে। উদাহরণ— HSC Bord Name Roll Year।
প্রসঙ্গত, করোনার সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাতিল হয়ে যায় পাবলিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও। অন্যান্য শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হলেও এইচএসসির ফল তৈরি করা হচ্ছে আগের জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে।