অবৈধ সম্পদ: জামিন মেলেনি সাবেক ওসি প্রদীপের
১০ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৩৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বরখাস্ত কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ দুর্নীতির একটি মামলায় জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলাটিতে স্ত্রীর সঙ্গে প্রদীপকেও আসামি করা হয়েছিল।
রোববার (১০ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত প্রদীপের জামিন নামঞ্জুর করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌসুলী মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৬ জানুয়ারি আসামি প্রদীপ কুমার দাশ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। আজ (রোববার) শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানিতে আমরা জামিনের বিরোধিতা করি। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন এবং এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৮ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।’
এর আগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় প্রদীপের আরও একদফা জামিনের আবেদন নাকচ হয়।
অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের একটি আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রদীপ এখন কারাগারে আছেন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর মামলাটি এখন বিচার শুরুর পর্যায়ে আছে।
এই ঘটনার পর গত বছরের ২৩ আগস্ট দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে চার কোটি ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের করেন। দুদকের অভিযোগ- উল্লিখিত অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদ তাদের মালিকানায় আছে, যা তারা সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করেছেন।
ওই মামলায় দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রদীপের উপস্থিতিতে শুনানি করে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। ২০ সেপ্টেম্বর দুদক ‘অবৈধভাবে অর্জিত’ তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করে।
আবেদনে প্রদীপ ও চুমকির হেফাজতে থাকা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৪ টাকার স্থাবর সম্পদের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- রেজিস্ট্রেশন খরচসহ ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো মাইক্রোবাস, ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো প্রাইভেটকার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখায় রক্ষিত ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ টাকা।
একই আবেদনে তিন কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ আছে। এর মধ্যে আছে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয়তলা একটি বাড়ি। এর জমির দাম ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ভবনের দাম এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ ১৪ কোটি ২১ লাখ ৭০০ টাকা। এরপর আছে নগরীর পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমির ওপর সাত লাখ টাকা দামের সেমিপাকা ঘর। কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকায় একটি ফ্ল্যাটের বিষয়ও উল্লেখ আছে আবেদনে।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, উল্লিখিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ স্থানান্তর ও হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির কারণ আছে। এজন্য এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণপূর্বক দুদকের একজন রিসিভার নিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য এসব সম্পদ অবরুদ্ধকরণের জন্য চট্টগ্রাম সদরের সাব রেজিস্ট্রার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক এবং চট্টগ্রামের বিআরটিএ’র উপ-পরিচালকের প্রতি আদেশ জারি করার আবেদন করে দুদক।
আদালত আদালত দুদকের আবেদন গ্রহণ করে মামলায় উল্লিখিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।