ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সতর্ক থাকবে স্বাস্থ্য অধিদফতর
১১ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:১৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, তাদের দুই থেকে তিন শতাংশের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের মধ্যে মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বমি হওয়া বা ভ্যাকসিন নেওয়ার স্থানে ব্যথা করতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের মতো তীব্র প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) দেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানোর জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ভ্যাকসিন বিতরণ কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক। এসময় তিনি বলেন, এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর সতর্ক থাকবে। এসব বিষয়ে আমাদের সব পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হবে।
আরও পড়ুন- নিবন্ধন শুরু ২৬ জানুয়ারি: যেভাবে কাজ করবে করোনা ভ্যাকসিনের অ্যাপ
ডা. শামসুল হক বলেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে সবচেয়ে বেশি যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেটি হলো শ্বাসকষ্ট। এক্ষেত্রে তীব্র জ্বরও হতে পারে। এটি এক ধরনের ‘সাডেন শক’। মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, হালকা জ্বর ভাব, যেখানে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে সেখানে ব্যথা এবং মাথা ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাবের মতো প্রতিক্রিয়ার কথা জানা গেছে। তবে এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের দুই থেকে তিন শতাংশের মধ্যে। যেকোনো ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এমন মাইল্ড থেকে মডারেট বা সিভিয়ার এফেক্ট হতে পারে। এজন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার খুবই কম উল্লেখ করে ডা. শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশে শিশু ও বড়দের যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, সেখানে অ্যানাফাইলিক্সিস বলে একটা কথা রয়েছে। এই অ্যানাফাইলিক্সিস হচ্ছে একটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া— যেটা যেকোনো ক্ষেত্রেই হতেই পারে। এটাকে আমরা বলি আফটার ইফেক্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন। বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার সময় অ্যানাফাইলেক্সিস বলে একটা কথা আছে, এটা মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু অ্যানাফাইলেক্সিসেরও ধরন আছে। এজন্য যারা টিকা দেবে, তাদের প্রশিক্ষণের সময় এ বিষয়টা অবহিত করা হবে। এটা ঘটলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে জানাবে।
তিনি বলেন, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আমাদের কেন্দ্রভিত্তিক প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিম, কেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ অ্যানাফাইলিক্সিসের জন্য মজুত রাখা হবে। কারও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। উপজেলা হাসপাতালেও যদি এমন দুর্ঘটনা ঘটে, সে বিষয়টি ভেবে সেখানে প্রস্তুতি নেওয়া থাকবে।
আরও পড়ুন- সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করে নিতে হবে ভ্যাকসিন, দেওয়া হবে কার্ড
ডা. শামসুল হক বলেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে গ্রহীতাকে একটি সম্মতিপত্রে সই করতে হবে। কারণ, যাকে আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি তার অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এজন্য একটি সম্মতিপত্র তৈরি করেছি। সেখানে নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, তারিখ ও পরিচয়পত্র থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমার ধারণা খুবই কম মানুষের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকবে। যেকোনো নতুন ওষুধের ক্ষেত্রেও এ ধরনের আশঙ্কা থাকে। তবে যেহেতু নতুন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, তাই আমরা প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা করেছি। এছাড়াও মোবাইল টিম থাকবে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে।
ভ্যাকসিন যেখানে প্রয়োগ করা হবে, সেসব সেন্টারে প্রাথমিক পর্যায়ের ওষুধ ছাড়াও অন্যান্য ওষুধ লাগলে ইমিডিয়েটলি ম্যানেজ করার জন্য সেগুলোও থাকবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ফ্লোরা। তিনি বলেন, উপজেলার যেসব কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, যতদূরসম্ভব সেখানে এই ধরনের ব্যবস্থা রাখা হবে। এছাড়াও ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যাকআপ হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটি থাকবে। যদি কারও মাঝে সমস্যা দেখা যায়, তবে সেগুলো ভ্যাকসিনের কারণে হয়েছে নাকি তার আগে থেকেই অন্য অসুস্থতায় আক্রান্ত থাকার কারণে হয়েছে, সেগুলো বিবেচনা করা হবে। তারা সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।