ফাঁসি দিবসে সূর্যসেনকে শ্রদ্ধা, দেশপ্রিয়র বাড়ি রক্ষার আহ্বান
১২ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:১২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ৮৭তম ফাঁসি দিবসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শ্রদ্ধায় ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ, অগ্নিযুগের বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনকে স্মরণ করেছে। সূর্যসেনের ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সম্প্রতিকালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বাড়িটি দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার করে জাদুঘরে পরিণত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকালে নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে স্থাপিত সূর্য সেনের আবক্ষ ভাস্কর্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় প্রশাসকের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম, সহকারী একান্ত সচিব স্বরূপ দত্ত রাজু ও প্রকৌশলী মীর্জা ফজলুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।
ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, চট্টগ্রাম বিপ্লব ও বিপ্লবী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ, চিটাগং অ্যাসোসিয়েশন, পথিকৃত পাঠাগার, সূর্য সেন স্মৃতি পাঠাগার, শহীদ আসাদ স্মৃতি সংসদ চট্টগ্রাম ও শহীদ অধ্যক্ষ শান্তিময় খাস্তগীর স্মৃতি পরিষদসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন।
সিপিবি-যুব ইউনিয়ন-ছাত্র ইউনিয়ন
নগরীর জে এম সেন হলে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাক অধ্যাপক অশোক সাহা, ফরিদুল ইসলাম, অজয় সেন অমিতাভ সেন ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল শিকদার, টুটন দাশ, রাশিদুল সামির, মিটুন বিশ্বাস পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি এ্যানি সেন, কোতোয়ালি থানার কোষাধ্যক্ষ অয়ন সেনগুপ্ত, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক এস এম নাবিল, পাহাড়তলী সংসদের সদস্য শুভ নাথ ও আন্দরকিল্লা আঞ্চলিক শাখার যুগ্ন আহ্বায়ক নিলয় সেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনটি সংগঠনের পক্ষ থেকে মাস্টারদাকে স্মরণ করে আলাদাভাবে সভা হয়েছে। এতে বক্তারা বলেন, ‘মাস্টারদার দেখানো পথে বিপ্লবী তৎপরতায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ পরাজিত হয়েছে। যুদ্ধ করে পাকিস্তানি শাসকদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে এদেশের মুক্তিকামী জনগণ। কিন্তু আমাদের কাঙ্খিত গণতান্ত্রিক ও শোষণ-বৈষম্যহীন রাষ্ট্র আজও আমরা পাইনি। বরং ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা করছে লুটেরা-দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী।’
তারা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেই বাড়ি দখলের চেষ্টা চলছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি ও প্রগতিশীল চেতনার উপর আঘাত। আমরা চাই, দখলদার থেকে বাড়িটি মুক্ত করা হোক। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই বাড়িতে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হোক।’
সিপিবি-যুব ইউনিয়ন ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা আরও বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত জালালাবাদ পাহাড়েও এখনো কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। যুব বিদ্রোহের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সোনালী অতীত এখনো অজানা। সবস্তরের পাঠ্যপুস্তকে এই ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইতিহাস রক্ষা এবং মাস্টারদা সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদার, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তসহ বিপ্লবের মহানায়কদের স্মরণে বন্দরনগরীর প্রধান সড়কগুলোর নামকরণ করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পক্ষ থেকে মাস্টারদা সূর্যসেন ও বিপ্লবী তারেকেশ্বর দস্তিদারের ৮৭তম ফাঁসি দিবস উপলক্ষে নগরীর জে এম সেন হলে বিপ্লবীর আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এসময় সংগঠনের নগর শাখার সভাপতি মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শিবু প্রসাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার পলাশ ছিলেন।
চট্টগ্রামের রাউজানে সূর্য সেন স্মৃতি পাঠাগারের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া সূর্য সেন, স্কুলে শিক্ষকতার কারণে পরে যার নামের আগে মাস্টার দা যুক্ত হয়। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, জালালাবাদ যুদ্ধ ও ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্বদানকারী এ বিপ্লবী ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইংরেজ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই