Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নিয়ে তদন্ত কমিটির কাজ শুরু

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:১৯

ঢাকা: তিন বছরে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৯ বছরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের মাত্র ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে কমিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিবের নেতৃত্বে এরই মধ্যে প্রথম বৈঠকও করেছে কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন— স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের একজন কর্মকর্তা এবং আইএমইডির সংশ্লিষ্ট ডেস্কের একজন কর্মকর্তা। প্রথম বৈঠকের পর এই কমিটিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন সদস্যকেও অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) আইএমইডি সম্মেলন কক্ষে কুষ্টিয়া মেডিকেল নিয়ে তদন্ত কমিটির প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে কবে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হবে, কিভাবে করা হবে, কোন কোন বিষয় দেখা হবে— এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

আরও পড়ুন-

পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা যায়, ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এরপর প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর ও দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল প্রকল্পটির। তবে দুই বছর মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পের কাজ এগোয়নি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পরে প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়, সময় বাড়ানো হয় আরও তিন বছর। ২০১৬ সালের ওই সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬১১ কোটি টাকা। তিন বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় একনেকে। ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটির আন্তঃখাত সমন্বয়ও করা হয়।

এর মধ্যেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সবশেষ দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে ৭৪২ কোটি টাকা ও মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। গত বছরের ১২ মার্চ প্রথম প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রথম পিইসি সভার সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে পালন না করায় গত বছরের ২৬ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অবেশেষে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ধরে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছিল।

দফায় দফায় মেয়াদ ও প্রকল্পের ব্যয় মূল প্রাক্কলিত ব্যয়ের দ্বিগুণ করেও লাভ হয়নি শেষ পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির মাত্র ৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, আর্থিক অগ্রগতি ৩৬ শতাংশের কিছু বেশি। এ অবস্থায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত ৫ জানুয়ারি উপস্থাপন করা হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। কিন্তু বাস্তবায়নের ধীরগতি দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী ও একনেকে চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠকে তিনি প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মেনেই তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠকের মধ্য দিয়ে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। এতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি যুক্ত করার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। প্রকল্পটির সব কিছুই খতিয়ে দেখা হবে। প্রধানন্ত্রীর নির্দেশ থাকায় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, একনেক বৈঠকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনেই আমি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। বিষয়টি ভালোভাবেই তদন্ত করে দেখা উচিত। প্রধানমন্ত্রীও তাই চান।

সূত্র জানায়, কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ফলে তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের অনুমোদন দিলেও প্রকল্পটি বারবার সংশোধন করতে হয়েছে। এছাড়া সংশোধনী প্রস্তাবের প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যের দামও বেশি ধরা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পিইসি সভায় বিষয়টি ধরা পড়ে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, গত ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে রেজিস্ট্রেশন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬ লাখ টাকা। সেটি বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ে ৩ লাখ টাকার জায়গায় ধরা হয় ১৫ লাখ টাকা। স্টেশনারি কিনতে ৬ লাখ টাকার জায়গায় ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ১২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় ভ্রমণেও, ৮ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা চাওয়া হয়।

পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব খাতে নতুন করে প্রস্তাব করা অর্থের অঙ্ক অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তাই এসব অঙ্গের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। তবে চূড়ান্ত ডিপিপিতে পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ মেনে এসব খাতে ব্যয় কমিয়ে নিয়ে এসেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবকিছু নিয়েই এখন তদন্তের মুখে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

৯ বছরে বাস্তবায়ন ৫৫% আইএমইডি কুষ্টিয়া মেডিকেল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল টপ নিউজ পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প তদন্তে কমিটি প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রিতা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ সংশোধনী প্রস্তাব


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর