বিজ্ঞাপন

কুষ্টিয়া মেডিকেলের অগ্রগতি নিয়ে একনেকে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ

January 5, 2021 | 9:12 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কুষ্টিয়ায় মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রকল্পটি তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে তিন বছর তো দূরের কথা, প্রকল্প শুরুর পর ৯ বছরে কাজ শেষ হয়েছে অর্ধেকের সামান্য বেশি। এ অবস্থায় প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য আরও দুই বছর সময় চেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করে উত্থাপন করা হয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)। প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন দীর্ঘসূত্রিতায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর জের ধরে এই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার কারণসহ প্রকল্পের সার্বিক দিক দ্রুত তদন্ত করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) একনেক বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব। এটি দেখেই বারবার সময় বাড়িয়েও কেন প্রকল্পটি শেষ করা যায়নি— এর কারণ জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

আরও পড়ুন- কুষ্টিয়া মেডিকেল: ২ দফা মেয়াদ বাড়িয়েও বাস্তবায়ন ৫৫%, বাড়ছে ব্যয়

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মেয়াদ অনেক আগে শেষ হলেও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম— ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এখন আবার নতুন করে বাড়তি ব্যয় ও বাড়তি মেয়াদ চেয়ে সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা যায়, ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এরপর প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর ও দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল প্রকল্পটির। তবে দুই বছর মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পের কাজ এগোয়নি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পরে প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়, সময় বাড়ানো হয় আরও তিন বছর। ২০১৬ সালের ওই সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬১১ কোটি টাকা। তিন বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় একনেকে। ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটির আন্তঃখাত সমন্বয়ও করা হয়।

দফায় দফায় মেয়াদ এবং প্রকল্পের ব্যয় মূল প্রাক্কলিত ব্যয়ের দ্বিগুণ করেও লাভ হয়নি শেষ পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির মাত্র ৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, আর্থিক অগ্রগতি ৩৬ শতাংশের কিছু বেশি। এ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় আরও ১৩১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৭৪২ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে।

বিজ্ঞাপন

এর ওপর গত বছরের ১২ মার্চ প্রথম প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রথম পিইসি সভার সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে পালন না করায় গত বছরের ২৬ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে এখন মোট ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ রেখে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় একনেক বৈঠকে। এর আগে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ স্থাপনের এই প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে খবরও প্রকাশ করেছে সারাবাংলা।

পরিকল্পনামন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতার স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন চিত্র দেখে ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির কাজের গতিতে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, এরকম কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এমন ধরনের প্রকল্প আমরা নেব না। আইএমইডি’র মাধ্যমে তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে হবে। প্রকল্পের আদ্যোপান্ত, আর্থিক-বৈষয়িক সব বিষয় দেখতে হবে। দরকার হলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যেকোনো সংস্থার সহায়তাও নিতে পারে এর জন্য।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এ সংক্রান্ত নির্দেশ জারি হবে। নির্দেশ পেলেই আমরা তদন্তের কাজ শুরু করব। প্রকৃত চিত্র প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার পর গণমাধ্যমের সামনেও তুলে ধরা হবে। এ প্রকল্পটি একটি কেস স্টাডি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন