বিজ্ঞাপন

‘ইরানের কোটি কোটি টাকা লুট করছে বাংলাদেশি সিন্ডিকেট’

May 16, 2024 | 11:17 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ধর্মীয় প্রতিনিধিকে সিন্ডিকেটের ‘কালো থাবা’ থেকে রক্ষা করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ইরানের আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সর্বপ্রথম পিএইচডি করা বাংলাদেশি ছাত্র ডক্টর সামিউল হক।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার (১৫ মে) ডক্টর সামিউল হক এই মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে ডক্টর সামিউল হক বলেন, ‘সারা পৃথিবীর নির্যাতিত মুসলমান— সেটি কাশ্মীরে হোক, ফিলিস্তিনে হোক, উইঘুরে হোক, বসনিয়ায় হোক, ইয়েমেনে হোক, বার্মায় হোক – সবার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ইরানি ত্রাণকর্তা, যেন মসীহা। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাঈল এবং সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একজোট হয়ে সেই ত্রাণকর্তা ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। ইসলামী বিপ্লবের আগে থেকেই এখন পর্যন্ত যারপরনাই শত্রুতা করে চলেছে। যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে, সন্ত্রাসী হামলার চালিয়ে, স্যাংশন দিয়ে, রাজনৈতিক নেতা ও বিজ্ঞানীদের হত্যা করে। সেই ইরানের মান সম্মান নিয়ে টানাটানি করছে বাংলাদেশি সিন্ডিকেট।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি সিন্ডিকেট আব্দুল কুদ্দুস বাদশা, মীর আশরাফ, মঈন উদ্দীন, আলী নেওয়াজ খান, ইউনুস আলী গাজী, মেরাজ মুনশী- এই ৬ জন ইরানের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হলেন কানাডা প্রবাসী এক বাংলাদেশী নারী, রেডিও তেহরানের সাবেক সংবাদ পাঠিকা শাহানাজ আরেফীন। তিনিও অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইরানের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন।’

বিজ্ঞাপন

ড. সামিউল হক জানান, বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইরানের আল মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েই তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু তিনি যখন বুঝতে পারেন যে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুমোদন নেই, ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র দুর্নীতি করার উদ্দেশ্যেই সেটিকে সম্পূর্ণ অবৈধ করে রেখেছেন এবং তারা জঙ্গিবাদী সংগঠনের আদলে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাদের ভর্তি করেন। তাদেরকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইরানে অবস্থিত আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মুল ক্যাম্পাসে পাঠানোর মতো লোভনীয় অফার দেন। এরপর চাকরির সুযোগ, তারপর আবার ইরান থেকে বিনামূল্যে পিএইচডি ডিগ্রির অফার! সঙ্গে থাকা খাওয়া ফ্রী, প্রতিমাসে হ্যান্ডসাম হাতখরচা, পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো মোটা অঙ্কের নগদ টাকার নিশ্চয়তা! এসব কথাবার্তার বলে ধোঁকা দেওয়া হয়।

‘প্রতিমাসে প্রাপ্য সম্মানীর টাকাও বাঙালি সিন্ডিকেটের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে আটকে ছিল। আর লেখাপড়া শেষ করার পর ওই হাজার হাজার ডলারের এককালীন প্রদেয় মোটা অংকের অর্থ বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের কারণে এখন পর্যন্ত হাতে পাননি’ বলেন ডক্টর সামিউল হক।

সামিউল হক বলেন, ‘অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছি তারপর ইরানের রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের অনুরোধের পর ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করি। সেখানেও একই সিন্ডিকেটের দখল। আমার বেতন ধাপে ধাপে কমাতে কমাতে তিন ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনা হয়। অবশ্য আমাকে কেনাকাটার করার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়, আমি যেন কেনাকাটার ফাঁকে চুরি করে কম বেতনের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারি। কিন্তু আমি একজন আলেম, আমি কোরআনের উপর পিএইচডি করা মুফাসসির। অবৈধ অর্থ আমার জন্য হারাম। এরপর আমি ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকেও ইস্তফা দিই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইরান সরকার বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য সুযোগ সুবিধা দিলেও কয়েকজন বাঙালির তৈরি সিন্ডিকেটের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি তাদের চৌর্যবৃত্তির কারণে বাংলাদেশের মাটিতে ইরানের ভবিষ্যত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে গেছে।

সামিউল হক উল্লেখ করেন কয়েক বছর আগে ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি এমন একটি পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অবস্থিত ছিলো যে, ঐ ভবনের মালিক বারবার নোটিশ প্রদান করেন এবং সর্বশেষ একরকম গলাধাক্কা দিয়েই ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সেখান থেকে সরাতে বাধ্য করেন। দীর্ঘদিন ধরেই ইরানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটি একটি অবৈধ ও পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তো রেজিস্ট্রেশন নাই, এমনকি ইউজিসি থেকেও অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। নিষিদ্ধ সংগঠনের মতো ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তি করা হয়, গোপনে ক্লাস করানো হয়। ইন্টারনেটে আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি লিখে সার্চ দিলেই নারী কেলেঙ্কারির চিত্র সামনে হাজির হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি সিন্ডিকেটে কালো থাবায় পড়েছেন। তাকে এই থাবা থেকে রক্ষা করতে না পারলে ইরানের সুনাম নষ্ট হবে। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ড. সামিউল হক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আল্লাহ না করুন, যদি এদের হাতে বাংলাদেশে অবস্থিত ইরানের প্রক্সিযোদ্ধাদের জন্য প্রেরিত বিশাল অংকের অর্থ এসে যায়, প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র এসে যায়, তাহলে তো এরা দেশ ধ্বংস করে ফেলবে।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন
শিয়া বানিয়ে নারী পাঠাচ্ছে ইরানি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ শাখা

 

 

সারাবাংলা/ইআ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন