‘বিভাজন নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে’
১৭ জানুয়ারি ২০২১ ২১:৩৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিভাজন তৈরি না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য ও সংহতি রক্ষার জন্য ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রাক্তন নেতারা। বিগত সম্মেলনের কাউন্সিলরদের একাংশ ‘রিকুইজেশন সম্মেলনের’ দাবি তোলায় প্রাক্তন কর্মী হিসেবে তাদের আবেগ ও অনুভূতি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংগঠনটির চট্টগ্রামের প্রাক্তন নেতারা নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ছাত্র ইউনিয়নকে অশুভ স্বার্থে যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফয়েজ উল্লাহকে সভাপতি ও দীপক শীলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪১ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনের পর ৩০টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধিরা গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয়ের অভিযোগ তুলে রিকুইজেশন সম্মেলন বা নতুন করে সম্মেলনে দাবি তোলেন এবং এ সংক্রান্ত স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন।
গত বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে ‘বিদ্রোহীদের’ আয়োজনে প্রতিনিধি সভা হয়। সভা শেষে তারা নতুন নেতৃত্ব গঠনে জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দেন। এর ফলে ৫৫ বছর পর দেশের ঐতিহ্যবাহী এই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনটিতে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাঙনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সংগঠনটির প্রাক্তন নেতাকর্মীরা।
এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন নেতারা বলেন, ‘৪০তম সম্মলনে আসা কাউন্সিলরদের একটি অংশ রিকুইজেশন সম্মেলনের দাবি জানানোর প্রেক্ষিতে যে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে প্রাক্তন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসাবে আমাদের আবেগ এবং অনুভূতিকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। ছাত্র ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র মোতাবেক জাতীয় সম্মেলন সংগঠনের সর্বোচ্চ পরিষদ। সম্মেলনে উত্থাপিত যেকোনো বিষয়ে দ্বিমত দেখা দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এখানে ভুল বুঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। ফলে গঠনতন্ত্রে রিকুইজেশন সম্মেলনের উল্লেখ থাকলেও ছাত্র ইউনিয়নের ৬৮ বছরের ইতিহাসে অনুষ্ঠিত ৩৯টি সম্মেলনে রিকুইজেশন সম্মেলনের প্রয়োজন অনুভূত হয়নি। বরং রিকুইজেশন বিষয়ক গঠনতান্ত্রিক ধারাটি এতদিন অপ্রয়োজনীয় ধারা হিসাবেই বিবেচিত হয়ে আসছিল।’
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়ে তারা বলেন, ‘কাউন্সিলরদের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা রিকুইজেশন সম্মেলনের মাধ্যমে নয়, বরং নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করাই উত্তম। আমরা মনে করি, ঐক্য এবং সংহতি ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম মূল ভিত্তি। সুতরাং ঐক্য বিনষ্ট করে সংগঠনের মধ্যে বিভাজন তৈরির যেকোনো কার্যকলাপ বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছাত্র ইউনিয়নের অগ্রযাত্রা এবং বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একইসাথে দেশে বাম প্রগতিশীল ধারার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করবে।’
‘ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের প্রথম অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ৬৮ বছরের ইতিহাসে শহীদ শাহাদাত, আসলাম এবং রাজুসহ সংগঠনের অগণিত ত্যাগী ও সাহসী কর্মীর রক্ত, শ্রম ও ঘাম মিশ্রিত আছে। তাই ছাত্র ইউনিয়নকে কোনো চক্র যাতে তাদের অশুভ স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারেও বর্তমান নেতৃত্বকে সচেতন থাকতে হবে।’
প্রাক্তন নেতারা আরও বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়ন আমাদের আবেগের এবং ভালোবাসার সংগঠন। সংগঠনের প্রয়োজনে প্রাক্তনদের সহযোগিতার দ্বার উম্মুক্ত ছিল-আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সংগঠনের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের পথ বর্তমান নেতৃত্বকে খুঁজে বের করতে হবে।’
সভায় সংগঠনের প্রাক্তন নেতাদের মধ্যে মোহাম্মদ আতিক, সাইফুদ্দিন খালেদ খসরু, নাজিম মুরাদ, ফজলুল কবির মিন্টু, শিমুল দত্ত, প্রকাশ ঘোষ, আরিফ বাচ্চু, মিন্টু চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চীনপন্থী ও মস্কোপন্থীদের মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া চৌধুরী ও রাশেদ খান মেনন- এ দুইভাগে বিভক্ত হয়েছিল। সেটিই ছিল প্রতিষ্ঠার পর এ যাবৎকালে ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম ও একমাত্র ভাঙন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই