Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পৌর নির্বাচন নিয়ে ইসির স্বস্তি, সমালোচনায় ভোট ব্যবধান

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জানুয়ারি ২০২১ ২২:০১

ঢাকা: চলমান পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন স্বস্তি প্রকাশ করলেও সমালোচনা তাদের পিছু ছাড়ছে না। বরাবরের মতো পৌরসভা নির্বাচনেও ব্যালট ও ইভিএমে ভোটের ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, ব্যালটে ভোট গ্রহণে তুলনামূলকভাবে কারচুপির সুযোগ বেশি থাকায় এতে ভোট বেশি কাস্টিং হয়েছে। বিপরীতে ইভিএমে অপেক্ষাকৃত কারচুপির সুযোগ কম থাকায় ভোট কাস্টিংও কম হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে বেশি ভোটের ব্যবধান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

ইসি সূত্র জানায়, গত দুই বছরের বিভিন্ন নির্বাচনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেশি ভোট পড়েছে। আর ইভিএম’র নির্বাচনে পড়েছে কম ভোট। বিশেষ করে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ১৩টি বড় নির্বাচনের মধ্যে ইভিএম ও ব্যালটের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২০ সালে ব্যালটের ৫টি নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বিপরীতে ইভিএমে অনুষ্ঠিত ৮টি নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি বছরের ১৬ জানুযারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম ও ব্যালটের ভোটের ব্যবধান কিছুটা কমে ১০ শতাংশে নেমেছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে ভোটের উপস্থিতি বাড়ছে। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ বাড়ার কারণেই এটা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইভিএম-এ নির্বাচনে কম ভোট পড়ার কারণ আমাদের জানা নেই। অনুমান করে এ বিষয়ে কথা বলা আমার পদ থেকে শোভা পায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে ভোটের এত বেশি ব্যবধান কেন হচ্ছে, তা আমাদেরও নজরে এসেছে।’

অন্যদিকে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দুই ধাপে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি না থাকলেও প্রথম ধাপে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই তেলেসমাতিটা কী? তেলেসমাতিটা হলো জাল ভোট, কারচুপি ও ইভিএম।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএমে যা দেখাতে চায় তাই দেখানো যায়। অনেকে বলেছেন, ইভিএমেও আগের রাতে ভোট দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই ধাপের নির্বাচনে ইভিএম ও ব্যালটের মধ্যে ভোটের ব্যবধান প্রায় ১৪ শতাংশ। সুজন সম্পাদক বলেন, ‘ইভিএম করা হয়েছে মূলত জাল ভোট বন্ধ করার জন্য। এখন দেখা যাচ্ছে ইভিএমেও জাল ভোট হচ্ছে।’

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন

গত ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে চারটি পৌসভার মেয়র বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৫৬টির মধ্যে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট হয়েছে ৩০টিতে এবং বাকি ২৬টিতে ইভিএমে ভোট হয়েছে। এই ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ব্যালটের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৭ শতাংশ। আর ইভিএমে ভোট পড়েছে ৫৭ শতাংশ। এই দুই ধরনের নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান ১০ শতাংশ। ফলে এক বছরে ইভিএম ও ব্যালটের নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। তারপরও এই ব্যবধানকে অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।

২০২০ সালের আলোচিত ১৩ নির্বাচন

২০২০ সালে রাজধানীসহ সারাদেশে ১৩টি বড় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।এর মধ্যে ১১টি সংসদীয় শূন্য আসনে উপনির্বাচন এবং রাজধানীর ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ১১টি উপনির্বাচনের মধ্যে ছিল চট্টগ্রাম-৮, ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩, বাগেরহাট-৪, যশোর-৬, বগুড়া-১, পাবনা-৪, ঢাকা-৫, নওগাঁ-৬, ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১। ১৩টি উল্লেখযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে পাঁচটি ব্যালটে এবং আটটি ইভিএমে অনুষ্ঠিত হয়। ইভিএমে গড় ভোটের হার ছিল ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ব্যালটে ভোট পড়েছে ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

দুই ধাপে পৌর নির্বাচনের ফলাফল

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে মোট ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে মেয়র পদে মোট ভোটের ৬০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পেয়ে ৪৬টি জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা পেয়েছেন ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ ভোট। বাকি ২২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৪ পৌরসভার মধ্যে সরকারি দলের প্রার্থীরা ৬৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮টিতে জয় পেয়েছিলেন। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীরা পেয়েছিলেন ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ ভোট এবং মেয়র পদে দুটিতে জয় পেয়েছিলেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটিতে জয়লাভ করেন।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

ইসির স্বস্তি পৌর নির্বাচন ভোট ব্যবধান সমালোচনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর