ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে
২১ জানুয়ারি ২০২১ ০০:৩২
ঢাকা: রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রয়োগ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন বিতরণের পরিকল্পনা এরই মধ্যে করে ফেলা হয়েছে। প্রথম দিন চিকিৎসক, নার্স, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, সাংবাদিকদের একজন করে প্রতিনিধিকে টিকা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এটাই প্রাথমিক পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন- উপহারের ২০ লাখ ভ্যাকসিন আসছে কাল: স্বাস্থ্যসচিব
বুধবার (২০ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আবদুল মান্নান। সংবাদ সম্মেলনে দেশে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ সম্পর্কে যৌথভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ ও স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বলেন, ১৯ জানুয়ারি জাতীয় কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পৌঁছাবে। আর ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে বলে জানিয়েছে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেদিন সম্মতি দেবেন, সেদিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। ভার্চুয়ালি কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কবে নাগাদ অনুষ্ঠানটি করা হবে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু জানানো হয়নি। ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর জন্য আমাদের একটা সম্ভাব্য দিন ঠিক করা আছে— ২৭ অথবা ২৯ জানুয়ারি। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। আমরা প্রথম দিন এরকম ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এই ২০-২৫ জন কারা হবেন, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে উদ্বোধন হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘প্রথম দিন ভ্যাকসিন পাবেন ২৫ জন, পরদিন ৪ হাসপাতালে ড্রাই রান’
সচিব আরও বলেন, ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালকে নির্বাচন করা হয়েছে। সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রথমদিন ভ্যাকসিন দেওয়ার পরদিন ড্রাই রান বা টেস্ট হিসেবে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তারপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, এক সপ্তাহ অপেক্ষা করব। আমরা দেখবো ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে তাদের মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কি না। অভিজ্ঞতা না থাকায় সতর্কতামূলকভাবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে চিকিৎসকরা ফলোআপের জন্য থাকবেন। এছাড়াও ভ্যাকসিন গ্রহীতা সবাইকে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হবে। এছাড়াও প্রতিদিন প্রেস রিলিজে জানানো হবে সব আপডেট।
আবদুল মান্নান বলেন, উপহার হিসেবে পাওয়া ভ্যাকসিন ঢাকায় কোল্ড চেইনে রাখার চেষ্টা করছি আমরা। ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানো হবে। এটা ইপিআই কর্মসূচির আওতায় যেভাবে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়, সেভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে সারাদেশে ভ্যাকসিন বিতরণ শুরু হবে। সরকারের কেনা ভ্যাকসিন জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো। আর ভারত সরকারের উপহার হিসেবে আসা ভ্যাকসিনও ইপিআইয়ের আওতায় জেলা পর্যায়ে পৌঁছানো হবে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা-উপজেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেওয়া হতে পারে।
সরকারি হাসপাতালের বাইরে কোথাও ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না এবং ভ্যাকসিন সম্পর্কিত প্রচার প্রচারণায় তথ্য মন্ত্রণালয় সাহায্য করবে বলে জানান স্বাস্থ্য সচিব।
সচিব আব্দুল মানান্ন বলেন, ভারত সরকারের উপহার হিসেবে আগামীকাল (২১ জানুয়ারি) আমরা ২০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পাবো। আর ২৫ জানুয়ারি পাবো চুক্তি অনুযায়ী ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। এই ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনকে সমন্বয় করে ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাতীয়ভাবে প্রয়োগ শুরু হবে। প্রথম মাসে দেওয়া হবে ৬০ লাখ ভ্যাকসিন। দ্বিতীয় মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ ডোজ। তৃতীয় মাসে আবার ৬০ লাখ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রথম মাসে যারা ভ্যাকসিন পাবেন, তৃতীয় মাসে তারা দ্বিতীয় ডোজ পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী জুয়েনা আজিজ, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান